কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
নিকাশি নালা পরিষ্কারে নেমে পড়লেন বাসিন্দারা
কাজ করার কথা ছিল পুরসভার। অথচ সমস্যার কথা বার বার এলাকার পুরপিতা থেকে শুরু করে পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। দিনের পর দিন সমস্যায় ভুগতে ভুগতে শেষমেশ এলাকার মানুষ নিজেদের কাঁধেই সেই কাজের দায়িত্ব তুলে নিলেন। আর সেই দায়িত্ব পালনেই রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার বাসিন্দারা নেমে পড়েছিলেন নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজে। পুরুষদের পাশাপাশি কাজে হাত লাগান মহিলারাও। তাঁদের সাহায্য করতে রাস্তায় নেমে পড়ে স্কুলপড়ুয়ারাও।
বনগাঁ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ায় নিকাশির সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলারকে তাঁরা বার বার সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুফল হালদার অবশ্য বাসিন্দাদের এই উদ্যোগকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে নিকাশি নালা সাফাই অভিযানে নেমেছেন বাসিন্দারা তা আগের পুরবোর্ডের আমলে তৈরি। তখন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ছিলেন তৃণমূলের জ্যোৎস্না নাথ। নিকাশি নালাগুলি অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ফলে ঠিকমতো জল বেরোতে পারে না।” বাসিন্দারা বার বার আবেদন জানালেও কেন তিনি নিকাশি নালা সাফাইয়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হননি জানতে চাওয়া হলে সুফলবাবুর যুক্তি, “পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্যের সঙ্গে কথা বলে বাইরে থেকে আরও শ্রমিক আনার ব্যবস্থা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজে হাত দেওয়া হত। ওই পরিকল্পনার কথা জেনে যাওয়ার পরে কংগ্রেস বাদে অন্য সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হল। তবে যাঁরা এ দিন সাফাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁদের আমি স্বাগত জানাই।”
নিজস্ব চিত্র।
যে নিকাশি নালা নিয়ে সমস্যা, সেটি স্থানীয় বৈরাগীপাড়ার মধ্যে দিয়ে দু’দিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি গিয়েছে শিবমন্দির ঘাট পর্যন্ত। অন্যটি নেতাজি সঙ্ঘ পর্যন্ত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই নালাগুলি পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন আবর্জনা জমতে জমতে নালাগুলির নিকাশি ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলারের কাছে নালা পরিষ্কারের দাবি জানাতে গেলে তিনি বলেন, ‘আগের পুরবোর্ড ওই নালা তৈরি করেছে। ওই নালা পরিষ্কারের দায়িত্ব আমার নয়’। এ দিন সকালে পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল এলাকার মহিলা, পুরুষরা ঝুড়ি, কোদাল, বালতি, বাঁশ, নিয়ে নালা থেকে আবর্জনা তোলার কাজে নেমে পড়েছেন। কাজের ফাঁকেই জানালেন, মাটি আর আবর্জনায় নালা বুজে গিয়েছিল। জল বর হতে পারত না, ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় নোংরা জল জমে যেত। দুর্গন্ধে টেঁকা যেত না। পুরসভার সাফাই বিভাগের সভাপতি হিমাদ্রি মণ্ডল বলেন, “এলাকার মানুষ কিছুদিন আগে নালা সাফাইয়ের দাবিতে পুরসভায় স্মারকলিপি দেন। তারপর এলাকায় গিয়ে সমীক্ষা করা হয়। পুরচেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজের জন্য শ্রমিকও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলারের আপত্তিতেই কাজ করা যায়নি। কাউন্সিলার জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর সুবিধামতো শ্রমিক নিয়ে কাজ করবেন।” যদিও এ সব কথাকে উড়িয়ে দিয়েছেন সুফলবাবু। তিনি বলেন, “আমার এলাকায় কাজ করতে এলে আমি কেন শ্রমিকদের বাধা দেব? এটা কখনও হয়? ওই শ্রমিকেরা দু’তিন দন কাজ করার পর নিজেরাই চলে যান।”
আর এ সব নিয়ে কী বলছেন পুর চেয়ারম্যান জোৎস্না আঢ্য?
“নিকাশি নালার মধ্যে হাঁটুসমান মাটি জমে গিয়েছে। পুরসভার স্থায়ী কর্মীদের পক্ষে তা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাইরে থেকে শ্রমিক এনে দু’একদিনের ভিতরেই সাফাইয়ের কাজ শুরু করা হবে।”
নিকাশি নালা সাফাই নিয়ে এই ‘গড়িমসি’-র নেপথ্যে অবশ্য শোনা গিয়েছে রাজনীতির খেলার কথা। বনগাঁ পুরসভায় এখন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। চেয়ারম্যান তৃণমূলের এবং ভাইস চেয়ারম্যান কংগ্রেসের। পুরসভায় তৃণমূলের সদস্যসংখ্যা ৬ এবং কংগ্রেসের ৫। যে ওয়ার্ডে নিকাশি নালা নিয়ে সমস্যা, সেখানে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিরোধ রয়েছে কংগ্রেস কাউন্সিলার সুফলবাবুর। কংগ্রেসকর্মীদের একাংশ মনে করেন, এ দিনের ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ‘মদত’ রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা মনোতোষ নাথ বলেন, “বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সুফলবাবুর বাড়িতে এবং পুরসভায় দাবি জানিয়েও কোনও ফল পাননি। তাই নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কাজে নেমে পড়েন। বাসিন্দাদের এমন কর্মোদ্যোগকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.