দুর্নীতির জন্য ভারতীয় নাগরিকেরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে প্রায়শই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। ধনতন্ত্রের পীঠস্থান আমেরিকায় দাঁড়িয়ে সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ ইয়েচুরি বলেছেন, তথাকথিত ‘আর্থিক উদারনীতি’র যে পথে ভারত চলেছে, তাতে দুর্নীতির অবকাশ বাড়ছে। আর ওই নীতির ফলেই এক দিকে ‘ঊজ্জ্বল ভারত’ (শাইনিং ইন্ডিয়া) এবং অন্য দিকে ‘যন্ত্রণাক্লিষ্ট ভারত’ (সাফারিং ইন্ডিয়া) দু’ধরনের ভারতের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে। দুর্নীতি মোকাবিলায় সার্বিক রক্ষাকবচের প্রয়োজন।
ওয়াশিংটনের ‘স্ট্যানফোর্ড সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলেপমেন্ট’-এ ‘দুর্নীতি ও ভারতে শাসন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় প্রত্যাশিত ভাবেই এ দেশের টু-জি কেলেঙ্কারির দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন ইয়েচুরি। তাঁর মতে, যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ওই কেলেঙ্কারির জেরে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে হারাতে হয়েছে, সেই টাকায় দেশের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করা যেত বা শিক্ষার সুযোগকে আরও প্রসারিত করা যেত। লাইসেন্স রাজের জমানায় লাইসেন্স পাওয়াকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি হত। এখন খনির ‘লিজ’-এর মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে দুর্নীতি হয়। শুধু শক্তিশালী লোকপাল বিলই যে দুর্নীতি রোখার একমাত্র দাওয়াই নয়, সেই মতপ্রকাশ করে ইয়েচুরি বলেন, সংসদে শক্তিশালী আইন তৈরি করতে হবে। শাসনব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ হতে হবে সংসদের কাছে, যে সংসদ আবার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।
পশ্চিমী শ্রোতাদের সামনে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ সরস ভঙ্গিতে ইয়েচুরি ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ তার ‘সৃষ্টিশীলতা’ কাজে লাগিয়ে যুগে যুগে দুর্নীতির নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করে চলেছে! প্রাচীন ভারতের সেই রাজার দুধপুকুরের গল্প শুনিয়ে তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন রাজ্যসভার সাংসদ। রাজা চেয়েছিলেন দুধপুকুর গড়তে। তাই প্রজাদের এক ঘটি করে দুধ ঢালতে বলেছিলেন পুকুরে। প্রজা ভাবলেন, সবাই তো দুধই ঢালবে, তিনি জল নিয়ে গেলে ক্ষতি কী? রাজা শেষমেশ দেখলেন, পুুকুর জলেই ভর্তি হয়ে গিয়েছে! ‘নৈতিক অসততা’র দৃষ্টান্ত হিসাবে এই কাহিনি উল্লেখ করে ইয়েচুরি আরও বলেন, এক নেতা একটি ‘ওয়ান ওয়ে’ রাস্তা তৈরি করলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরে সেই রাস্তা উল্টো দিকে ‘ওয়ান ওয়ে’ হয়ে গেল! তারও পরে দু’দিকে চলাচলের জন্য সেই রাস্তা খুলে দেওয়া হল! এই রকম ঘটনাও ঘটে!
অন্না হজারের আন্দোলন যে ভারতে জনপ্রিয় হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েই ইয়েচুরি স্ট্যানফোর্ডে বলেন, মোহনদাস গাঁধী, জয়প্রকাশ নারায়ণ থেকে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ নানা সময়েই ‘প্রত্যাখ্যানের রাজনীতি’ জনমানসে মান্যতা পেয়েছে। শুধু লোকপাল বিল নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বিক রক্ষাকবচের কথা বলে নির্বাচনী সংস্কারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন ইয়েচুরি। বলেন, কোনও কর্পোরেট সংস্থার কোনও দলীয় তহবিলে চাঁদা দেওয়ার বদলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য জাতীয় তহবিলে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। মার্কিন মুলুকে এক শ্রোতার প্রশ্ন ছিল, ১৫ বছর পরে সিপিএম কি আর ‘প্রাসঙ্গিক’ থাকবে? ইয়েচুরির জবাব, “সিপিএমের যা বক্তব্য, সেগুলো যতদিন প্রাসঙ্গিক থাকবে, সিপিএম-ও তত দিন প্রাসঙ্গিক থাকবে!” |