দুর্নীতি রোধে বিহারে শক্তিশালী লোকায়ুক্ত বিল আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নীতীশের ইচ্ছা, বিলের খসড়া তৈরির দায়িত্ব নিন কর্নাটকের লোকায়ুক্ত প্রাক্তন প্রধান সন্তোষ হেগড়ে। নীতীশ কুমারের হয়ে সম্প্রতি অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তাবও দিয়েছেন সন্তোষকে। প্রাথমিক ভাবে নীতীশের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন সন্তোষ। সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে নীতীশ সরকারি ভাবে সন্তোষকে এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বলবেন।
ইতিমধ্যেই কর্নাটকের লোকায়ুক্ত আইন রচনা করে বিখ্যাত হয়েছেন সন্তোষ হেগড়ে। সম্প্রতি তাঁরই রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরতে হয়েছে বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে। কয়েক দিন আগে অণ্ণা হজারের সমর্থনে মন্তব্য করেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন হেগড়ে। এ হেন হেগড়েকে লোকায়ুক্তের জন্য রাজি করাতে ‘অণ্ণার টিম’কেই বেছে নেন নীতীশ। কুমার। জেডিইউয়ের এক নেতা বলেন, “সাধারণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব সন্তোষ হেগড়ে ফিরিয়ে দিলে সেটা খারাপ দেখাত। সে কারণেই নীতীশ প্রথমে প্রবীণ সমাজবাদী নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শান্তিভূষণের দ্বারস্থ হন। তিনিই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হেগড়ের কাছে পাঠিয়ে নীতীশের প্রস্তাবের কথা জানান। প্রাথমিক ভাবে সন্তোষ তাঁর সম্মতিও জানিয়েছেন।”
নীতীশের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করে কর্নাটক থেকে টেলিফোনে সন্তোষ হেগড়ে বলেন, “আমি কর্নাটকের লোকায়ুক্ত রচনার সময় যুক্ত ছিলাম। পরে পাঁচ বছর লোকায়ুক্তের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছি। সে কারণেই বোধহয় নীতীশ কুমারের কাছ থেকে ওই প্রস্তাব এসেছে। প্রাথমিক ভাবে এতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সরকারি ভাবে কোনও প্রস্তাব এখনও আমার কাছে আসেনি।”
সন্তোষ জানান, শক্তিশালী লোকায়ুক্ত করতে গেলে এটিকে একটি নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। লোকায়ুক্তের অধীনে রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকেও আনার পক্ষপাতী তিনি। স্বাধীন লোকায়ুক্তের সঙ্গে পুলিশের দুর্নীতি-দমন শাখাকে জুড়ে দিয়ে একটি পৃথক দুর্নীতি-দমন শাখা তৈরি করা উচিত বলেও মনে করেন হেগড়ে।
তবে লোকায়ুক্ত তৈরিতে হেগড়ের সাহায্য নেওয়ার উদ্যোগ ঘিরে বিহারে জেডিইউয়ে এবং এনডিএ জোটে যে বিতর্কের সৃষ্টি হবে না, এমনটা এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ইতিমধ্যেই সংসদে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালু প্রসাদের সঙ্গে এক সুরে অণ্ণার আন্দোলনের সমালোচনা করেছেন জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব। এই অবস্থায় অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সন্তোষ হেগড়েকে শরদ মেনে নেবেন কিনা, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই দলে উঠতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, ইয়েদুরাপ্পার অপসারণ নিয়েও বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। এমনিতেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক আদৌ মধুর নয়। জেডিইউয়ের এক নেতার কথায়, “এ বার মনে হচ্ছে বিজেপি-র আর এক নেতার সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক তিক্ত হতে চলেছে।” |