বাড়ি-বাড়ি ‘তথ্য সংগ্রহ’-কে কেন্দ্র করে তৃণমূল শাসিত বিধাননগর পুরসভার সঙ্গেও সংঘাত বাধতে চলেছে সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের। এবং এ বারও সেই মামলার হুমকিই দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ পুর কর্তৃপক্ষ।
পুর-প্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই তথ্য-সংগ্রহের সঙ্গে করের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রতিটি বাড়ি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পুরসভা একটি সার্বিক তথ্য-ভাণ্ডার গড়তে চাইছে। সেই প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া অর্থহীন। আর অ্যাসোসিয়েশনের আশঙ্কা, বাড়ির মালিকদের দিয়ে এই সংক্রান্ত ফর্ম পূরণ করিয়ে, পরোক্ষে সম্পত্তিকর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট’ প্রক্রিয়াই শুরু করতে চাইছে পুরসভা। এই দুয়ের মাঝখানে পড়ে নাজেহাল ‘সুস্থ’ নাগরিকেরা। তাঁরা চান পরিষেবা, কর দিতে তাঁদের আপত্তি নেই।
এমনিতেই অর্থাভাবে ধুঁকছে বিধাননগর পুরসভা। অনাদায়ী সম্পত্তিকরের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকারও বেশি। অর্থাভাবে জলপ্রকল্প-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আটকে রয়েছে। রাস্তার বেহাল দশা। এমনকী, দৈনন্দিন পরিষেবাতেও টান পড়েছে। পাশাপাশি, বকেয়া কর জমতে থাকায় সাধারণ বাসিন্দাদের একাংশ আশঙ্কিত। তাঁরা মনে করছেন, এই কর জমতে জমতে শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছেই বোঝা হয়ে উঠছে।
পুরসভার এই তথ্য-সংগ্রহ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, পুরসভা সূত্রে খবর, সম্প্রতি কাউন্সিলরদের এক বৈঠকে কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট’ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করেননি। দ্বিতীয়ত, পুর-কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও সেই পথেই যে বিধাননগর পুরসভা হাঁটতে চলেছে, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাজ্য সরকার কলকাতা পুরসভার মতো বিধাননগরেও ‘ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট’ পদ্ধতিতে কর নির্ধারণ করতে চাইছে বলে সম্প্রতি তিনি ইঙ্গিত দেন। এমনকী পুরসভার এই ফর্ম বিলি তারই প্রাথমিক ধাপ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ফলে কর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আগাম আইনি হুমকি দিতে শুরু করেছে। যদিও পুর-প্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দাবি, “বিধাননগরে গত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কোথাও একতলা বাড়ি দোতলা করা হয়েছে, কেউ বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, কেউ বা বাড়িতে ব্যবসা করছেন। কিন্তু সেই সব তথ্য আমাদের কাছে নেই। পর্যাপ্ত পরিকাঠামোও নেই যার মাধ্যমে এই সব তথ্য জানতে পারব। তাই একটি ফর্ম পাঠিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে বাড়ি ও জমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আমরা জানতে চাইছি।”
কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানতে নারাজ সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা অতীতের সমস্যা না মিটিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কার্যকর করতে চাইছে। সংগঠনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুর-কর্তৃপক্ষ আইনের পথে চলুক। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো ২০০৫-২০১০ সময়ে পুরনো হারে কর আদায় না করে সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট করতে চাইছে পুরসভা। যা নিয়ে জটিলতা বাড়তে পারে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই না। যদি বাধ্য করা হয়, তা হলে মামলার কথা ভাবতে বাধ্য হবে সংগঠন।”
বিতর্ক যাই হোক না কেন, পরিষেবা নিয়ে জেরবার ও অসন্তুষ্ট বহু বাসিন্দারই মত, কর বিতর্কের অবিলম্বে অবসান হওয়া উচিত। অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা নিয়েও বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সেক্টর টু-এর এক বাসিন্দার বক্তব্য, “কর দেব না, পরিষেবা চাইব এ তো হতে পারে না। পুরসভা শক্ত হোক। ভোটের দিকে না তাকিয়ে কাজ করুক। কর আদায় করুক।” সেক্টর থ্রি-র এক বাসিন্দা প্রশ্ন তুলেছেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নিয়েই। তাঁর কথায়, “সল্টলেকবাসীর একক প্রতিনিধিত্বের অধিকার ওঁরাই বা পেলেন কোথায়? অ্যাসোসিয়েশন তো বাসিন্দাদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নয়।” তাঁদের প্রশ্ন, পুরসভা আদালতের রায় মোতাবেক কর আদায় শুরু করছে না কেন? এ সম্পর্কে পুর-প্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তীর বক্তব্য, “ঝুলে থাকা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর আদায় শুরু করতে পারছি না। এর ফলেই পুর-পরিষেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে।” |