|
|
|
|
পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি উত্তর-পূর্ব |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
পর্যটক টানতে সেজেগুজে উঠেছে মেঘালয় ও অসম। শারোদৎসব, ওয়াংলা উৎসবের রেশ ধরেই পর্যটন মরশুমে উত্তর-পূর্বে সবচেয়ে বেশি পর্যটক টানতে তৈরি এই দুই রাজ্য। সেই সঙ্গে অসমের মূল দুই আকর্ষণ---কাজিরাঙা ও পবিতরাও পিছিয়ে নেই। প্রথমবার মায়ং-পবিতরা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকের চাপে সময়ের আগেই, শনিবার সরকারিভাবে কাজিরাঙার দরজা খুলে দিতে হল।
তবে দ্রষ্টব্যের পসরা আর প্রকৃতির ডাক থাকলেই পর্যটনে বাজিমাত করা যায় না। এখন ‘প্যাকেজ’-এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই মেঘালয় পর্যটন বিকাশ নিগম ৪ নভেম্বর থেকে ‘শরৎ উৎসব’-এর আয়োজন করেছে। নিগমের মুখপাত্র আর জে লিংডো বলেন, “উত্তর-পূর্ব বলতেই মূল ভূখণ্ডের মানুষ বন্দুক-আন্দোলন-এইড্স বোঝেন। তাঁদের ভ্রম কাটাতেই, গোটা উত্তর-পূর্বের পসরা নিয়ে এই ‘শরৎ উৎসব-২০১১’ আয়োজন করা হচ্ছে।” তিন দিনের এই উৎসবে উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্য অংশ নেবে। অংশ নেবে স্থানীয় সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সাংস্কৃতিক দল, হস্তশিল্পীরা। চূড়ান্ত আকর্ষণ অবশ্যই বড়াপানির অর্কিড লেক রিসর্টে ‘গ্রান্ড ফিনালে’। পাহাড় আর সরোবরের প্রেক্ষাপটে বসবে রং, রূপ, বিকিকিনি, নাচ-গান, খাবার পসরা। মণিপুরের কৃষ্ণ ব্যালে, পুং চোলোম এবং থং লা মার্শাল আর্ট শেষ দিনের অন্যতম বড় চমক। তবে লিংডোর মতে, উৎসবের তুরুপের তাস অবশ্যই ফরাসি প্যারা গ্লাইডাররা। ‘অ্যাক্রো ফ্লাইট্স’ দলটি বিশ্বে প্যারাগ্লাইডিং-এর করসতে বিখ্যাত। তাঁদের সঙ্গে পাহাড় থেকে ডানা বেঁধে ঝাঁপ দেওয়ার অমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার হাতছানি দিচ্ছে মেঘালয়ের এই উৎসব। |
|
হাতি-সাফারি। রবিবার পবিতরা অভয়ারণ্যে। ছবি: উজ্জ্বল দেব। |
শরৎ উৎসব বিপণনের মোড়ক হলে, ওয়াংগালা হল ঐতিহ্য। আমাদের নবান্নের মতোই পশ্চিম গারো পাহাড়ে ফলনের উৎসব ওয়াংগালা। আসলে ‘মিসি সালজং’ বা ‘পাতিগিপা রারোংগিপা’ (মহান নদী)-কে বন্দনা করা হয় ওয়াংগালা উৎসবে। আর সেই বন্দনার অংশ হল, এক সঙ্গে ১০০ ঢাকের দ্রিমি দ্রিমি বোল। ১৯৭৬ সাল থেকে উৎসবের আকারে ওয়াংগালা পালন করা হচ্ছে। শনিবার ওয়াংগালা দলকে ১৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বলেন, “এখানকার বিপন্ন আচিক সংস্কৃতিকে রক্ষা করা ও ওয়াংগালা উৎসবকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনতে বিশেষ উদ্যোগী হবে সরকার।” পশ্চিম গারো পাহাড়ের আসানাং-এ ওয়াংগালায় অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকেও গারো জনজাতির মানুষজন আসেন। আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। ৯ নভেম্বর মিসি সালজং নদীর উদ্দেশে প্রথম রুগালিয়া (ভাতের মদ), ভাত ও তরকারি নিবেদন করে উৎসবের সূচনা করবেন স্থানীয় ‘নোকমা’ (গ্রাম প্রধান)। জ্বালাবেন ‘চাচাত সো’ বা পবিত্র ধূপকাঠি। এবারের ওয়াংগালায় অংশ নেবেন ভারত-বাংলাদেশের মোট ৩০০ শিল্পী।
মেঘালয় যেমন উৎসবের মোড়কে নিজেকে তুলে ধরছে, তেমনই অসমেও প্রথমবার মায়ং-পবিতরা উৎসবের আসর বসতে চলেছে। পবিতরা অভয়ারণ্য একশৃঙ্গ গন্ডারের ঘনত্বে বিশ্বসেরা। গুয়াহাটি থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেক লাগে গাড়িতে। আবার যে মায়াং পাহাড়ের কোলে এই অভয়ারণ্য, সেই মায়ং বিখ্যাত ভোজবাজির জন্য। কথিত আছে, মায়ং-এ অসাধু অনুপ্রবেশকারীকে জন্তু বানিয়ে দেওয়া হয়। বহু কিংবদন্তি থাকলেও, মায়াং-এর জাদুবিদ্যা আজ অবধি গোপনই রাখা হত। বংশানুক্রমে মহিলাপ্রধান এই জাদুবিদ্যার অনুশীলনে সাধারণের কোনও প্রবেশাধিকার ছিল না। সেই প্রথা ভাঙতে চলেছে। নভেম্বরের ২৫ থেকে ২৭ তারিখ, পবিতরায় মায়ং-পবিতরা উৎসবের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। দেখানো হবে জাদুবিদ্যা, ভেলকি। থাকবে কায়াকিং, নৌকা বিহার, পাহাড়ে ট্রেকিং, গ্রাম ভ্রমণ, স্থানীয় খাবার এবং হস্তশিল্প সংগ্রহের সুযোগ। সেই সঙ্গে নানা উপজাতির নাচ-গান আর হাতির পিঠে চেপে গন্ডার-পাখি দর্শন তো রইলই।
তবে অন্য অরণ্য যতই চেষ্টা করুক কাজিরাঙার ‘ক্রেজ’ কিন্তু কমছে না। বর্ষার জন্য ১ মে বন্ধ হয়ে যায় কাজিরাঙা। খোলে ১ নভেম্বর। কিন্তু এই বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকের চাপে শনিবারই উৎসবের মেজাজে কাজিরাঙার পর্যটন মরশুম শুরু হয়ে গেল। খুলে গেল জঙ্গলের দরজা। হাতি আর জিপের লম্বা লাইনের পিছনে হা-পিত্যেশ করে থাকা পর্যটকদের লাইন দেখিয়ে দিল কাজিরাঙার আছে কাজিরাঙাতেই। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি একশৃঙ্গ গন্ডারের চারণভূমি, বাঘের ঘনত্বেও বিশ্বের সেরা, বারাশিঙার বসতিতে পয়লা নম্বর----এমন জঙ্গলে ভিড় তো হবেই। তবে এখনও আসেনি সব ক’টি হাতি। জিপ ঢোকার অর্ধেক রাস্তা এখনও সারানো হয়নি। কোহরায় ১২টি, বাগোরিতে ১৬টি ও বুড়াপাহাড় রেঞ্জে তিনটি হাতি পর্যটকদের ঘোরাচ্ছে। বাকি পোষা হাতিরাও এল বলে। গত বছর কাজিরাঙা ঘুরেছিলেন ১ লক্ষ ১২ হাজার পর্যটক। এবার সংখ্যাটি দেড় লক্ষে পৌঁছতে পারে বলে কর্তৃপক্ষের আশা। খোলা হচ্ছে ট্রেকিং ও সাফারির নতুন কিছু গন্তব্যও। |
|
|
|
|
|