দিনের পর দিন জি টি রোডের দু’পাশ গিলে খাচ্ছে দখলদারেরা। পথচারীরা ব্যধ্য হয়ে ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দিয়েই চলছেন। ফলে আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত দীর্ঘ এই ১১ কিলোমিটার রাস্তায় বাড়ছে দুর্ঘটনাও। পূর্ত দফতরের তরফে জানানো হয়, বারবার তাঁদের তুলে দেওয়া হলেও কিছু দিনের মধ্যেই ফের তাঁরা ফিরে আসেন। কী ভাবে এর হাল ফিরবে সে নিয়ে চিন্তিত পূর্ত দফতর ও পুলিশ প্রশাসন।
জি টি রোডের চাপ কমানোর জন্য বিকল্প একটি জাতীয় সড়ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। জাতীয় সড়কের টোল ফাঁকি দিয়ে ভারি পণ্যবাহী যান চলাচল করে জি টি রোড ধরেই। যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও ৬ ও ১০ চাকার লরিও নিত্য যাতায়াত করে এই পথেই। কিন্তু সেই অনুপাতে জি টি রোড চওড়া করা হয়নি। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, জি টি রোডের একাধিক জনবহুল এলাকায় রাস্তার দু’পাশ ঘেঁষেই অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। এই সব অঞ্চল অত্যন্ত দুর্ঘটনা প্রবণ হয়ে উঠেছে। পূর্ত দফতরের আসানসোল ডিভিশনের কার্যনির্বাহী আধিকারিক মহম্মদ রাকিব বলেন, “যেভাবে রাস্তার দুপাশ দখল হয়ে যাচ্ছে তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
কিন্তু এ ভাবে রাস্তার দু’পাশ দখল করে সরকারি জমির উপরে বাণিজ্য ফেঁদে বসা তো বে-আইনি। পূর্ত দফতর কেন এই দখলদারদের তুলে দিচ্ছে না? দফতরের আসানসোল ডিভিশনের কার্যনির্বাহী আধিকারিক মহম্মদ রাকিবের জবাব, “আমরা বহু বার দখলদারদের উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার তাঁরা ফিরে আসেন। নিয়মিত নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ফের রাস্তার দু’পাশ দখল মুক্ত করার অভিযান হবে।” |
মহম্মদ রাকিব আরও জানান, আসানসোল বাজার এলাকায় দু’চাকা ও চার চাকার পার্কিং মালিকেরা রাস্তার খানিকটা অংশও দখল করে নিচ্ছেন। তবে কুলটি পুরসভা এলাকার একাধিক জায়গার অবস্থা আরও খারাপ। সম্প্রতি রাস্তার দু’পাশ দখল করে নেওয়া সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে পূর্ত দফতর জানিয়েছে, কুলটি পুরসভা এলাকার নিয়ামতপুর, কুলটি নিউ রোডের প্রায় দু’শো মিটার এলাকা রানিতলা ও বরাকর বাসস্ট্যান্ড থেকে বেগুনিয়া মোড় পর্যন্ত অবৈধ দখলকারীদের কবলে চলে গিয়েছে। পূর্ত দফতরের কর্তারা জানান, এই সব জায়গায় স্থায়ী পাকা দালান তৈরি করে নিয়েছেন দখলদারেরা। এমনকী দোতলা ভবন তৈরি করে রমরমিয়ে তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। জি টি রোডের দু’পাশ দখল হয়ে রাস্তা ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়ায় শিল্প-বাণিজ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। এমনটাই মনে করেন বণিক সংগঠনগুলির সদস্যরা। ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খৈতান অভিযোগ করেন, পুরনো জি টি রোডের বেহাল দশায় পণ্যবাহী লরি ঢোকাতে পারেন না তাঁরা। ফলে বাণিজ্য মার খাচ্ছে। সম্প্রতি তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল আসানসোলের পুলিশ কমিশনারের কাছে আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় জি টি রোডের দুর্দশা নিয়েও আলোচনা করেন। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, প্রাথমিকভাবে আসানসোল পুরসভা এলাকায় একাধিক জায়গায় জি টি রোড চওড়া করা ও ফুটপাথ সংস্কারের খসড়া তৈরি হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। পরে অন্য অঞ্চলেও শুরু করা হবে। |