চোদ্দো বছর ধরে খোঁজ নেই স্বামীর। তিনি জীবিত রয়েছেন, না মৃত, অনুসন্ধান করে তা জানানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন জামুড়িয়ার নিউ কেন্দা গ্রামের বধূ আলপনা গোপ।
নিউ কেন্দা গ্রামে ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাওয়া বাড়িতে থাকেন আলপনাদেবী। তাঁর বাপেরবাড়িও এই গ্রামেই। আলপনাদেবীর অভিযোগ, ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে গীতাষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় চার জন সিপিএম সমর্থক তাঁর স্বামী
|
কানাই গোপ। নিজস্ব চিত্র। |
কানাই গোপকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই তাঁর। আলপনাদেবী মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, সেই সময়ে তিনি গর্ভবতী ছিলেন। বাড়ির লোকজন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রসবের পরে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। তার পরে আত্মীয়দের সঙ্গে কেন্দা ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করতে যান তিনি। কিন্তু ফাঁড়ির তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। পাল্টা তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আলপনাদেবীর।
তাঁর আরও অভিযোগ, এর পরে তাঁরা কেন্দা অঞ্চল কংগ্রেস কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানান। কংগ্রেস নেতৃত্ব ফাঁড়িতে গেলে তাঁদেরও বলা হয়, ‘অযথা সময় নষ্ট না করে দেখুন, কোথাও কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে হয়তো আছেন।’
আলপনাদেবী জানান, এ ভাবে ১৪ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্বামীর কোনও খোঁজ মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, গত ৩ অক্টোবর সংলগ্ন তপসি গ্রামের তৃণমূল কর্মী ধরমদাস নিখোঁজ হন। ৯ অক্টোবর তাঁর দেহ মেলে একটি অবৈধ কুয়ো খাদানে। তাঁর স্বামীর ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা তদন্ত করে জানানোর আবেদন করেছেন তিনি।
স্বামী নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন আলপনাদেবী। তাঁর ছেলে উজ্জ্বল এখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেই সময়কার কংগ্রেস নেতা, বর্তমানে তৃণমূলের কেন্দা অঞ্চল সভাপতি অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কানাইবাবু তখন কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা আলপনাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় না থাকায় তাঁরা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের হাতে চিঠি তুলে দেন বলে জানান অনুপবাবু।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী মলয়বাবু শুধু বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক গঙ্গা যাদব অবশ্য ওই ঘটনায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন ওই ব্যক্তি বাড়ি না ফেরায় সিপিএম পরিচালিত কেন্দা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে।” আসানসোলের পুলিশ জানায়, ঘটনাটি পুরনো। বিষয়টি তাদের জানা নেই। পদ্ধতিগত ভাবে জানার পরেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। |