|
|
|
|
দুই জেলায় সদস্যদের একাংশ ‘নিষ্ক্রিয়’ |
শাখা কমিটি কমাচ্ছে সিপিএম |
অনুপরতন মোহান্ত ও অরিন্দম সাহা • বালুরঘাট ও কোচবিহার |
উত্তরবঙ্গের দুই প্রান্তের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর ও কোচবিহারের বেশ কিছু এলাকায় দলের লোকাল ও শাখা কমিটির সংখ্যা কমাচ্ছে সিপিএম। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরেই নানা সিপিএমের নিচুতলার সদস্যদের একাংশ ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছেন। সে জন্য কাছাকাছি এলাকার শাখা ও লোকাল কমিটির সংখ্যা কমিয়ে দলকে আরও সুসংহত করতে চাইছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বালুরঘাটে সিপিএমের ১, ২ ও ৩ নম্বর লোকাল কমিটি ভেঙে দিয়ে তৈরি হয়েছে ১টি অ্যাড হক লোকাল কমিটি। কোচবিহারের দিনহাটায় ১৮টি লোকাল কমিটির মধ্যে একটি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দলের লোকাল ও জোনাল স্তরের সম্মেলনের মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র পাবে।
দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে বিরোধ ও ধারাবাহিক নিষ্ক্রিয়তার জেরে বালুরঘাটের তিনটি কমিটি ভেঙে একটি লোকাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিপিএমের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অমিত সরকার বলেন, “অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। বালুরঘাট শহরের ৩টি লোকাল কমিটি থেকে কেউই অন্য দলে যোগ দেননি। তবে নেতৃত্বের একাংশের বসে যাওয়ার বিষয়টি কিছুটা রয়েছে।” ২০ নভেম্বর বালুরঘাট শহর লোকাল কমিটির সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে দলের আর এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য জোনাল সম্পাদক হীরেন সাহা জানিয়েছেন।
গত বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩টি আসনে লড়াই করে সিপিএম একটিও পায়নি। বাকি তিনটি আসনে লড়াই করে আরএসপি পেয়েছে মাত্র একটি। একমাত্র কুশমণ্ডি আসনে আরএসপি জয়ী হয়। পাঁচটি আসনেই জয়ী হয় তৃণমূল। সার্বিক এই বিপর্যয়ের জেরে ছাত্র, যুব, কৃষক, সর্বত্র সংগঠনে ধস নেমেছে বলে মনে করছেন দলের নেতাদের একাংশ। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১০-১১ ডিসেম্বর গঙ্গারামপুরে অনুষ্ঠিত হবে ২ দিনের জেলা সম্মেলন। সেখানেও বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা। এই প্রসঙ্গে অমিতবাবু এবং হীরেনবাবু বলেন, “সংগঠন শক্তিশালী করতেই বিভিন্ন শাখা ও লোকাল কমিটি একত্রিত করা হচ্ছে।”
সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, দিনহাটা মহকুমার নাজিরহাট-১ এবং নাজিরহাট-২ নম্বর লোকাল কমিটি মিশিয়ে স্রেফ নাজিরহাট লোকাল কমিটি করা হবে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেণুবাদল চক্রবর্তী বলেন, “সাংগঠনিক কারণে নাজিরহাট ১ ও ২ নম্বর লোকাল কমিটি ভেঙ্গে একটি লোকাল কমিটি করার বিষয়টি আলোচনা স্তরে রয়েছে। আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।” রাজ্যের সরকার বদলের কয়েক মাসের মধ্যে শরিক দলের দখলে থাকা দিনহাটায় লোকাল কমিটির সংখ্যা কমানোর ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই। তৃণমূল ও শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকে সিপিএম কর্মীরা ভিড়ছেন বলেই নেতৃত্বকে লোকাল কমিটি কমাতে হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি নতুন মুখ আনার কথাও ভাবছেন সিপিএম নেতৃত্ব। জেলার বক্সিরহাট ব্লকে ইতিমধ্যে তিন জন লোকাল সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক বসানো হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে স্থায়ী সম্পাদকের দায়িত্ব বন্টন হবে। দিনহাটার ক্ষেত্রে এখনও কাউকে সরানো না হলেও নতুন মুখ তুলে আনার ব্যপারে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
সিপিএম সূত্রের খবর, আগামী ৭-৯ জানুয়ারি দলের কোচবিহার জেলা সম্মেলন দিনহাটায় হবে। বুধবার ওই সম্মলনের অভ্যর্থনা কমিটি গঠনের প্রস্তুতি বৈঠক হবে শহরের নৃপেন্দ্র নারায়ণ স্মৃতি সদনে। বার্ধক্যজনিত কারণে তো বটেই, বিধানসভায় বিপর্যয়ের পর জেলা সম্পাদক চণ্ডী পালকে সরিয়ে ওই পদে নতুন মুখ চাইছে দলের একাংশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেণুবাবু বলেন, “কে কোন দায়িত্বে থাকবেন তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।” |
|
|
|
|
|