|
|
|
|
প্রসূনদের সঙ্গে চুক্তি সই |
সময়ে নয়াচর না হলে জমি ফেরাবে রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নয়াচর প্রকল্প নিয়ে প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জানিয়ে দিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সমস্ত জমি ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় জনবসতিহীন দ্বীপ নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক তৈরির জন্য প্রসূনবাবুদের নিউ ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (এনকেআইডি) সংস্থার সঙ্গে ২০০৬ সালে চুক্তি করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। এই শিল্পতালুক তৈরির কাজ শুরুর আগেই দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে মূল চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায় এ বছরের মার্চে। মমতার সরকার সেই এড়কেআইডি-র হাতেই ফের নয়াচর তুলে দিল। তবে পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক গড়ার জন্য নয়। (এ ব্যাপারে মমতার বরাবরের আপত্তি) পরিবেশ-বান্ধব শিল্প গড়ার জন্য।
নতুন চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, ২০২৭ সালের মধ্যে নয়াচরে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “নয়াচরের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি রূপায়ণের জন্য আমরা লগ্নিকারী সংস্থাকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি।” যদি সময়ে কাজ শেষ না হয়, তা হলে নয়াচরের ১১ হাজার ৮০০ একর জমি এনকেআইডি-র কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার শর্তও চুক্তিতে রাখা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নয়াচরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় প্রকল্প গড়তে রাজি হওয়ার জন্য বারুইপুর ও হলদিয়ায় প্রসূনবাবুদের যে ৩৫০ একর জমি বাম আমলেই দেওয়া হয়েছিল, তা-ও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এই দুই জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠার কথা। |
|
নয়াচর চুক্তির পর শিল্পমন্ত্রীকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন এনকেআইডি-র আধিকারিক। নিজস্ব চিত্র |
নয়াচরের চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত কয়েক দিন ধরেই ক্যামাক স্ট্রিটের শিল্পভবনে তৎপরতা তুঙ্গে ওঠে। চুক্তির খসড়া নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছনোর জন্য দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়। গত মঙ্গলবারই সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, নয়াচর প্রকল্পের চুক্তি হতে চলেছে। সেই মতো চুক্তির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে এ দিন শিল্প দফতরের অফিসে প্রসূনবাবুর সংস্থা, শিল্প দফতর ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের মধ্যে দিনভর বৈঠক চলে। বিকালে শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। সই করেন এনকেআইডি-র পক্ষে প্রসূন সেনগুপ্ত ও প্রদীপ মল্লিক, শিল্পোন্নয়ন নিগমের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী এবং শিল্প দফতরের সচিব দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়।
শিল্পমন্ত্রী জানান, সব ক’টি প্রকল্পের জন্যই চুক্তি হয়েছে। এবং এ সবের জন্য যা যা অনুমোদন জরুরি, সবই লগ্নিকারী সংস্থা জোগাড় করবে। তবে রাজ্যও প্রয়োজন মতো সাহায্য করতে প্রস্তুত। নতুন শিল্প প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার কী কী সুবিধা দেবে? প্রসূনবাবু বলেন, রাজ্যে বিনিয়োগকারী অন্যান্য বড় শিল্পের জন্য সরকার যে অনুদান দেয়, আমরাও তা পাব।” পাশাপাশি শিল্পমন্ত্রী তাঁকে আরও একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান এই অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি। তাঁর দাবি, “শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন হলদিয়া থেকে নয়াচর পর্যন্ত সেতু বা রেলপথ নির্মাণ করার জন্য দু’পক্ষই চেষ্টা করবে।”
নয়াচরের নতুন পরিবেশ-বান্ধব শিল্প প্রস্তাবে তাঁদের সরকার সন্তুষ্ট জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, বাম আমলে প্রসূনবাবুদের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় এ বার রাজ্য সরকার সব দিক দিয়েই বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “সে জন্যই প্রসূনবাবুদের সঙ্গে চুক্তি করার আগে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। মন্ত্রিগোষ্ঠীতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আগের চুক্তির থেকে জনস্বার্থে অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয়েছে। রাজ্যের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে যে ধরনের সাবধানতা নেওয়া দরকার, সবই নিয়েছি।”
কিন্তু নয়া চুক্তিতে কী কী পরিবর্তন করা হল? তাঁরা কি এই চুক্তি প্রকাশ করবেন? চুক্তির খুঁটিনাটি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি শিল্পমন্ত্রী। তবে বলেন, “যা করেছি, সবই স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছি।” এবং মানুষের জানার অধিকার রয়েছে, (অবশ্য বাণিজ্যিক বিষয় বাদ দিয়ে) এমন তথ্য প্রয়োজনে প্রকাশ করতেও তাঁরা দ্বিধা করবেন না বলে জানান পাথর্বাবু।
এই মুহূর্তে রাজ্যের সর্ববৃহৎ প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী, এনকেআইডি সংস্থা নয়াচরে বিদ্যুৎ প্রকল্প, পর্যটন কেন্দ্র এবং শিল্পপার্ক তৈরি করবে। তিনটি প্রকল্পে মোট ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে প্রসূনবাবুর সংস্থা। শিল্প পার্কে আরও অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি আসবে
বলে তাদের দাবি। সব ঠিকঠাক চললে আগামী বছরের গোড়ায় প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী ৮০০ মৎস্যজীবী পরিবারকে পুনর্বাসন দিতে ‘মৎস্যজীবী গ্রাম’ তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে।
পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক বিরোধী অবস্থান বজায় রেখেই নয়াচরে নতুন প্রকল্প নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত করাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে দ্রুত শিল্প প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগী হচ্ছে, নয়াচর প্রকল্পের উল্লেখ করে নিন্দুকদের প্রতি পার্থবাবুর কটাক্ষ, “শিল্পে রাজ্য পিছিয়ে গিয়েছে, এটা আর বলা যাবে না।” |
|
|
|
|
|