সম্পাদকীয় ১...
নূতন কৌশল
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি মানিয়া গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জি টি এ) গড়ার চুক্তিতে স্বাক্ষরের কালি এখনও শুকায় নাই। ইহারই মধ্যে মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ আবার নূতন উদ্যোগ করিয়াছিলেন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতৃত্বের সহিত বোঝাপড়ায় উপনীত হইয়া উভয় সংগঠনই স্বশাসিত জি টি এ-র সহিত তরাই ও ডুয়ার্সকে সংযুক্ত করার দাবি তুলিয়াছিল। পরিষদ নেতৃত্বের তীব্র আপত্তি ও প্রবল আন্দোলনের জন্যই তরাই-ডুয়ার্সকে গোর্খাল্যান্ড স্বশাসিত প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই। কেননা পরিষদের বক্তব্য ছিল, তরাই-ডুয়ার্সে বসবাসকারী আদিবাসী, বাগিচা-শ্রমিক ও অনাদিবাসী বাঙালিরা গোর্খাদের কর্তৃত্ব শিরোধার্য করিতে নারাজ। তাই বিমল গুরুঙ্গ ডুয়ার্সের ১৯৬টি মৌজাকে গোর্খা প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাহা মানে নাই। ইহারই মধ্যে মোর্চা-পরিষদ বোঝাপড়াজনিত নূতন জটিলতা। তবে রাজ্য সরকার যে জি টি এ চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাহার বাহিরে এক পা-ও নড়িবে না, ইহা স্পষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে। আর তাহার পরেই মোর্চা ও পরিষদের নেতৃত্বও সুর নরম করিয়া ফেলিয়াছে।
সরকার যে মোর্চা ও পরিষদ নেতৃত্বের এই কৌশলের কাছে নত হইবে না, তাহা নিশ্চিতই ছিল। তরাই-ডুয়ার্সের জনসাধারণও কি গোর্খা প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত হইতে ব্যাকুল? পরিষদ নেতৃত্বের মধ্যেই এ প্রশ্নে মতভেদ তীব্র ও অনপনেয় হইয়া উঠিয়াছে। যে-সব পরিষদ নেতা গুরুঙ্গদের সহিত অভিন্ন মঞ্চে দাঁড়াইয়া পার্বত্য দার্জিলিঙের সহিত তরাই-ডুয়ার্সকে একই স্বশাসনের আওতায় আনার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়াছেন, তাঁহাদের সেই অধিকার কে দিয়াছে, সে-প্রশ্ন উঠিয়াছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ইহাকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কাছে আত্মসমর্পণ হিসাবে দেখিতেছেন। আর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত, ক্ষুব্ধ। চা-বাগানের শ্রমিকরা প্রস্তাবিত এই বন্দোবস্ত চান না, রাজবংশী-কোচ প্রভৃতি জনজাতীয়রা চান না, চাকুরিজীবী বাঙালি ও আদিবাসী কৃষিজীবীরাও চান না। তবে কাহার চাহিদায় এই সংযুক্তির প্রস্তাব? সমতলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্বেচ্ছাসেবকদের রুদ্রমূর্তি জনসাধারণ দেখিয়াছেন। স্বশাসন ও তাহার সূত্রে প্রাপ্য বিপুল তহবিল তথা রাজনৈতিক দর কষাকষির সুযোগের মোয়া দেখাইয়া গোর্খা নেতৃত্ব যে পরিষদ নেতাদের জালে ফাঁসাইতেছেন, এমন সন্দেহ অনেকের মনেই। সোজা পথে তরাই-ডুয়ার্সে প্রভুত্ব করার যে সুযোগ গুরুঙ্গরা হারাইয়াছেন, বাঁকা পথে তাহাই হাসিল করার চেষ্টা এই যৌথ প্রস্তাব।
রাজ্য সরকারের পক্ষে এ প্রস্তাব না-মানার অন্য কারণও আছে। শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সে যে বিপুলসংখ্যক বাঙালি রহিয়াছেন, তরাইয়ের যে-সকল বাঙালি পরিবার বহু বছর আগে শরণার্থী রূপে এ দেশে আসিয়া উত্তরবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হইয়াছেন, তাঁহাদের অভিপ্রায়ের কথাও রাজ্যকে মাথায় রাখিতে হইবে। একতরফা ভাবে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীকে খুশি করিতে গিয়া অন্য সব জনগোষ্ঠীকে বিরূপ ও বিক্ষুব্ধ করিয়া তোলার ঝুঁকি কোনও সরকারের পক্ষেই লওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচিত, প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের তরফে নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিও এ ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বকে বুঝিতে হইবে, পার্বত্য দার্জিলিঙের অবিমিশ্র গোর্খাপ্রাধান্যের অঞ্চলে জনজাতীয় স্বায়ত্তশাসন কায়েম করা যত সহজ, তরাই-ডুয়ার্সের মিশ্র জনগোষ্ঠীকে দিয়া অনুরূপ শাসনের অনুমোদন তত সহজ নয়। একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ জনজাতির দ্বারা শাসিত হইলে সেটাকে তাহাদের স্বশাসনও বলে না। তরাই-ডুয়ার্স গোর্খা প্রাধান্য শিরোধার্য করিবে বলিয়া মনে হয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.