|
|
|
|
সাংবাদিককে ধমক, পরে সুর নরম |
মানচিত্রে ভুল নিয়ে প্রশ্ন শুনে ক্ষিপ্ত চিনা রাষ্ট্রদূত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের এক অভূতপূর্ব ঘটনা আজ ঘটল নয়াদিল্লিতে। সেই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে বেজিং-এর নাছোড়বান্দা অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মহলের কাছে। ভারতের মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশ এবং অরুণাচল প্রদেশ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে এ দিন প্রকাশ্যেই এক ভারতীয় সাংবাদিককে ‘শাট আপ’ বলে ওঠেন চিনের রাষ্ট্রদূত ঝাং ইয়ান! ঘটনার জেরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে চিনের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়। এর পর চিনা দূতাবাসের তরফে সুর কিছুটা নরম করে বলা হয়, বারবার একই প্রশ্ন করায় ‘মাথা গরম করে’ ঝাং এটা বলে ফেলেছেন। বিষয়টি ভুল হয়ে গিয়েছে বলেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে চিনা দূতাবাসের তরফে। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন চিনা রাষ্ট্রদূত।
ঘটনার সূত্রপাত আজ বিকেলে একটি সাংবাদিক বৈঠকে। গুজরাতে একটি চিনা বিদ্যুৎ সংস্থার ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি সই উপলক্ষে এই সাংবাদিক বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। টিবিইএ নামের ওই চিনা বিদ্যুৎ সংস্থাটির প্রচার পুস্তিকার প্রচ্ছদে দেখা যায়, একটি বিশ্বমানচিত্র আঁকা যেখানে লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশকে রাখা হয়েছে চিনের মধ্যে! শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীরের একটি অংশও রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর! পুস্তিকাটি সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ করার পর স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। এক সাংবাদিক মানচিত্রটি নিয়ে রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করেন। গোড়ায় এটিকে ‘টেকনিক্যাল বিষয়’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ওই সাংবাদিক তাঁকে ফের এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এবং তখনই চিনা রাষ্ট্রদূত অপ্রত্যাশিত ভাবে ওই সাংবাদিককে ধমকে ওঠেন, “শাট আপ!”
পাল্টা রুখে ওঠেন ওই সাংবাদিকও। তিনি চিনা রাষ্ট্রদূতকে স্পষ্ট বলে দেন, “এটা চিন নয়, ভারত! এখানে আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কোনও সাংবাদিক আপনাকে প্রশ্ন করলে আপনি কী ভাবে তাঁকে চুপ করতে বলেন?” ঘটনাস্থলে উপস্থিত জিংজিয়াং প্রদেশের গভর্নর, চিনের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এবং চিন বিষয়ক বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব গৌতম বাম্বেওয়ালা সকলেই হতবাক রাষ্ট্রদূতের আচরণে। এই নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া তৈরি
হওয়ায় বাম্বেওয়ালা ভারতের আপত্তির কথা জানিয়ে দেন চিনা দূতাবাসের কর্তাদের। |
|
টিভি ক্যামেরায় চিনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকের কথা কাটাকাটির মুহূর্ত। ছবি: পি টি আই |
তার পরেই সুর নরম করেন চিনা কর্তৃপক্ষ।
কূটনৈতিক বিশেজ্ঞদের মতামত, হাত মেলালে বা ভুল স্বীকার করলেই কিন্তু বিষয়টি শেষ হচ্ছে না। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “এই ঘটনা থেকেই চিনের প্রকৃত মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক আলোচনায় মুখে যা-ই বলা হোক না কেন, চিন যে অরুণাচল নিয়ে কতটা মরিয়া, তা আজকে ঝাং ইয়ান-এর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট।” এর আগেও একাধিক বার অরুণাচলকে চিনের ম্যাপের মধ্যে দেখিয়েছে বেজিং। বিষয়টি নিয়ে ভারত বিভিন্ন স্তরে আপত্তি জানালেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের পৃথক ভিসা দেওয়ার প্রথা চালু করেছিল বেজিং। অবশ্য এ নিয়ে ভারত সর্বোচ্চ স্তরে আপত্তি জানানোর পরে তা আপাতত বন্ধ রয়েছে।
আর দু’সপ্তাহ পরেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের বৈঠক হবে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। তার আগে এই ধরনের ঘটনা দু’দেশের রক্তচাপ কিছুটা বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ভারতের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লির তরফ থেকে এমন কিছু করা হয়নি, যা প্রতিবেশী
রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা শিষ্টাচারকে আঘাত করে। চিনের রাষ্ট্রদূতের এ হেন আচরণে তাই সাউথ ব্লক যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। |
|
|
|
|
|