ফের বাড়ল পেট্রোলের দাম। চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থ বার। কলকাতায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম বেড়ে হচ্ছে ৭৩ টাকা ১৫ পয়সা।
দু’দিন আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির কর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে পেট্রোলের দাম বাড়ানো হতে পারে। তত দিন অপেক্ষা না করে কার্যত দু’দিনের মাথাতেই লিটার প্রতি ১ টাকা ৮২ পয়সা হারে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই এই বর্ধিত দাম কার্যকর হচ্ছে।
তেল সংস্থাগুলির যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এখনও অনেকটাই বেশি। পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ডলারের দাম এখন ৪৯ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ডলারে তেল আমদানি করতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের দাবি, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাস বিক্রি করতে গিয়েও তাদের দিনে ৩৩৩ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। কারণ পেট্রোলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলেও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম-জাত পণ্যের দাম এখনও সরকারই নিয়ন্ত্রণ করে। চলতি আর্থিক বছরে তিন সংস্থার লোকসানের মোট পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির চাপে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি। মনে করা হচ্ছে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে না হলেও, তার পরেই ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। আগামী বছরের শুরুতেই প্রথমে পঞ্জাব, তার পরে উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার ঠিক ঠিক আগে ডিজেল-কেরোসিন-রান্নার গ্যাসের দাম বাড়লে তা বিরোধীদের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে তেল সংস্থাগুলির দাবি মেনে ডিজেলে প্রতি লিটারে অন্তত ৩ টাকা দাম বাড়াতে হবে। রান্নার গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে সিলিন্ডারে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা।
দাম বাড়ানোর আগে অবশ্য শুধু বিরোধী দলগুলির আক্রমণ নয়, শরিকদের আপত্তির কথাও ভাবতে হবে সরকারকে। পেট্রোলের দাম বাড়ায় শরিক তৃণমূল ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট। তাঁদের এই ক্ষোভের কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
অর্থ মন্ত্রকের তরফে অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা চলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য করুণ হলে তাতে আখেরে দেশেরই ক্ষতি। তা ছাড়া সরকারের ভর্তুকির বহর বাড়লে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণও বাড়বে। অর্থনীতির নিয়ম মেনে আর্থিক ঘাটতি বাড়লে মূল্যবৃদ্ধিও বাড়বে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়েছিল প্রতি লিটারে ৩ টাকা ১৪ পয়সা। তার আগে জানুয়ারি ও মে মাসে দাম বেড়েছিল যথাক্রমে ৫ টাকা ও ৩ টাকা ৫০ পয়সা হারে। এ ছাড়া জুন মাসে ডিজেল-কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছিল। রাষ্টায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য ছিল, প্রতি লিটার পেট্রোলে তাদের দেড় টাকা লোকসান হচ্ছিল। স্থানীয় লেভি হিসেব করলে ১ টাকা ৮২ পয়সা দাম বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। সেই অনুযায়ীই দাম বাড়ানো হয়েছে। |