নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগকারী মূল তার ছিঁড়ে যাওয়ায় জলপাইগুড়ি জেলার বিএসএনএল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সংস্থার মোবাইল পরিষেবা থেকে ল্যান্ডলাইন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট সংযোগকারী ব্রডব্যান্ড থেকে ব্যাঙ্ক বা প্রশাসনিক দফতরগুলিতে ব্যবহারকারী লিজ লাইন সবই মঙ্গলবার রাত থেকে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। জলপাইগুড়ির এই মূল তারের সঙ্গে কোচবিহার জেলার কিছু অংশও জড়িত। ফলে কোচবিহারেও পরিষেবায় আংশিক বিঘ্ন ঘটেছে বলে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে। বুধবার সকালে ল্যান্ডলাইনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলেও লোকাল কল ছাড়া এসটিডি ও আইএসডি ফোন করা সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থার সূত্রে জানানো হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে যোগাযোগকারী মূল অপটিকাল ফাইবার তার ছিঁড়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি শহরে একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার ফাইবার অপটিকাল তার মাটি খুড়ে বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ করার সময়েই বিএসএনএলের ফাইবার তার ছিঁড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় বিএসএনএলের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের হলেও ঘটনাটিকে ‘অন্তর্ঘাত’ বলতে রাজি নয় বিএসএনএল। বেসরকারি সংস্থার কাজের বিষয়টি বিএসএনএলকে আগেভাগেই জানিয়ে রাখা হয়েছিল। সে কারণেই ঘটনাটিকে নিতান্তই দুর্ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় জেলায় বিএসএনএলের বেশির ভাগ পরিষেবাই স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। মঙ্গলবার রাত থেকেই মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। শহরের রাজবাড়িপাড়া এলাকায় মাটির নীচের তার ছিঁড়ে গিয়েছে বলে জানা গেলেও সেই তারটি মাটির নীচে কোনও তারের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তার খোঁজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবারেও সম্পূর্ণ মেরামতি সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। বিএসএনএলের জলপাইগুড়ির জিএম সুজিতকুমার রায় বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারনেট সব পরিষেবাই বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।” জলপাইগুড়ি জেলায় বিএসএনএলের ১ লক্ষেরও বেশি মোবাইল সংযোগ রয়েছে। মাটির নীচের অপটিকাল ফাইবার তারের মাধ্যমেই জেলার মোবাইল সার্ভারের সঙ্গে বিএসএনএলের মূল সার্ভারে যোগাযোগ করা হয়। সেকারণে মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। একবারে মোবাইল সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। বিএসএনএল তো বটেই, অন্যান্য মোবাইল সংস্থার থেকেও বিএসএনএল মোবাইল সংযোগ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবা ব্রডব্যান্ড সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি শহরেই প্রায় ৫ হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে। কোনও মতেই মঙ্গলবার রাতের পর সংযোগ পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন লীজ লাইনের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া হয়। সেই ব্যাঙ্কগুলিতে এ দিন পরিষেবার কাজ ব্যাহত হয়েছে। এটিএম পরিষেবাও পাওয়া যায়নি। জলপাইগুড়ি জেলাশাসক দফতর সহ মালবাজার ও আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসকের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। অপটিকাল ফাইবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএনএলের বিভাগীয় বাস্তুকার তরুণকুমার দে বলেন, “সমস্যাটি হল, কোন জায়গায় তার ছিঁড়েছে সেটি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেই ছেঁড়া তারের বাকি অংশ কোন এলাকায় মাটির নীচে রয়ে গিয়েছে সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ফলে তার জোড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। যতক্ষণ তার জোড়া না দেওয়া যাবে ততক্ষণ পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না।” বিএসএনএল সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৯৯৪ সালে এই মূল অপটিকাল ফাইবার তারটি মাটির নীচে বসানো হয়। তার পর শহরের রাস্তা সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ফুটপাত বাঁধানোর কাজ হয়েছে, সেকারণেই মাটির নীচের কোন অংশ ছিন্ন অপটিকাল ফাইবারের বাকি অংশ রয়েছে, তা খুঁজে পেতেই সমস্যায় পড়েছেন সংস্থার কর্তারা। |