নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
কয়েক মাসের মধ্যে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ধৃত মুম্বইয়ের একটি সংস্থার এজেন্ট রণবীর দাস গত বছরের ২৯ অক্টোবর একদিনে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলেন। ঘটনার তদন্তে নেমে এই তথ্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। রণবীর সহ ৩ জন এজেন্টকে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। বাকি দুজন হলেন, রাজীব ভদ্র ও দেবব্রত পাল। প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আপাতত তদন্ত শেষ না-হওয়া রণবীরবাবুর ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। বুধবারই শিলিগুড়ি থানা থেকে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে চিঠি পাঠানো হয়। একদিনে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লেও আয়কর দফতর কেন চুপ করে বসেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আয়কর দফতরের কর্মীদের একাংশও ওই সংস্থায় বিনিয়োগ করায় বিষয়টি নিয়ে দফতরের কর্মীরা উদাসীনতা দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আয়কর সংক্রান্ত কাজকর্ম করেন এমন কয়েকজন আইনজীবী বলেন, “একদিনে এত টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লে অবশ্যই আয়কর দফতরের খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু শিলিগুড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই আয়কর কর্মী এই বিষয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। এই ঘটনায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” পুলিশ অবশ্য এই ঘটনায় আয়কর দফতরের সাহায্য নেবে বলে জানিয়েছেন। মামলার এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “কী ভাবে এই অর্থলগ্নিকারী সংস্থাটি কর ফাঁকি দিয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখতে আয়কর দফতরের সাহায্য নেওয়া হবে। এদিন পুলিশ ধৃত রণবীর দাস ছাড়াও দেবব্রত পাল এবং মুম্বইয়ের ওই সংস্থার অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশা গণেশ সাহেবরাম চৌধুরীকে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে হাজির করে। ধৃতদের জামিনে মুক্তি চেয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী সুনীল সরকার, পার্থ চৌধুরী, চিন্ময় সাহা এবং শৌভিক সেনগুপ্ত। সুনীলবাবু এদিনও দাবি করেন, ধৃত রাজীব ভদ্র যাঁদের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন, প্রত্যেকেই টাকা ফেরত পেয়েছেন। অন্যদিকে, শিলিগুড়ি কলেজের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মাধ্যমে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁরা টাকা ফেরত পাননি। আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপ্রিয়া খান ধৃতদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, এই মামলায় ধৃত জীবন বিমা নিগমের কর্মী রাজীব ভদ্র এখনও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত রবিবার রাজীবকে আদালত থেকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার পরেই অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জীবন বিমা নিগম সূত্রের খবর, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সংস্থার তরফ থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আদালতে মামলার কেস ডায়েরি পেশ করে এদিন পুলিশ দাবি করে, মুম্বইয়ের ওই সংস্থাটি শিলিগুড়ি-সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গ জুড়েই বহু কোটি টাকার প্রতারণা করেছে। সরকারি আইনজীবী রণজিৎ সাহা বলেন, “অন্তত পক্ষে একশো কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশ সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।” এদিন আদালতে প্রদীপ পাল নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলাও পেশ করা হয়। তিনিও অভিযোগ করেছেন, ধৃত রাজীব ভদ্রকে তিনি কয়েক লক্ষ টাকা বিনিয়োগের জন্য দিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি আর ফেরত পাননি। পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় ধৃতেরা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন জড়িত। তাঁদের শনাক্ত করার জন্যই ধৃতদের ফের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ওই সংস্থা থেকে কমিশন হিসাবে বিলি করা গাড়ি আটক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। |