‘কর্মসমিতিকে অন্ধকারে রেখে’ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে চুক্তি করায় আদিবাসী নেতা জন বার্লা, তেজকুমার টোপ্পো-সহ ৫ জন নেতাকে ‘শো-কজ’ করল আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। পরিষদ সূত্রের খবর, এক সপ্তাহের মধ্যে ওই নেতাদের জবাব চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মোর্চার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে যিনি সই করেছেন, সেই নেতা জন বার্লাকে ডুয়ার্সের আঞ্চলিক সভাপতির পদ থেকে সাময়িক ভাবে অপসারণ করেছে পরিষদ।
বুধবার কলকাতায় সংগঠনের কার্যকরী সমিতির জরুরি বৈঠকের পরে রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেন, “সংগঠনকে না জানিয়ে ওইভাবে মংপং-এ মোর্চার সঙ্গে সভা করায় গোটা পরিষদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ওঁরা আমাকে বোঝাবেন বলেছেন। আমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। পুরো পরিষদকে বোঝাতে হবে ওঁদের। সে জন্য ওঁদের শো-কজ করা হয়েছে।” পাশাপাশি, রাজ্য সভাপতি জানান, যিনি মোর্চার সঙ্গে চুক্তিতে সই করেছেন, সেই জন বার্লাকে আপাতত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিষদের কার্যকরী কমিটি। শো-কজের জবাব পাওয়ার পরে পরের পদক্ষেপ করা হবে।
|
সাংবাদিক বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতা জন বার্লা (ডান দিকে)।-ফাইল চিত্র |
এই ব্যাপারে জন বার্লা বলেন, “আমি কলকাতায় গিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করব। তার পরে ৬ নভেম্বর ডুয়ার্সে আমাদের আঞ্চলিক কমিটির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” গত রবিবার সেবকের কাছে মংপং-এ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের চুক্তি করে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) বদলে আগামী দিনে গোর্খাল্যান্ড-আদিবাসী টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএটিএ) গঠনের ব্যাপারে সহমত হন জন বার্লা-সহ পরিষদের পাঁচ প্রথম সারির নেতা। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সে কথা ঘোষণা হয়।
তার পরেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে। তরাই-ডুয়ার্সের ২১টি সংগঠন পরিষদের ওই নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সিপিএম-সহ বাম দলগুলিও জিএটিএ-এর প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব হন। পাহাড়েও মোর্চা নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, জিটিএ চুক্তিতে যা রয়েছে, তার বাইরে এক পাও হাঁটবে না রাজ্য সরকার। মোর্চা নেতারাও কিছুটা সুর নরম করে জানিয়ে দেন, তাঁরা জিএটিএ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যকে অনুরোধ করলেও কোনও আন্দোলনের রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবছেন না। সুর পাল্টাতে হয় জন বার্লাদেরও। এই প্রেক্ষিতে এ দিন কলকাতায় পরিষদের কার্যকরী কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পরে নেতারা জানান, পরিষদ কোনও রাজনৈতিক দল নয়। একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সে জন্য সংগঠনের কার্যকরী কমিটিকে না জানিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কারও চুক্তি করার অধিকার নেই। তার পরেই পাঁচ নেতাকে শো-কজ করে জন বার্লাকে পদ থেকে সাময়িক ভাবে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় বিরক্ত আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সর্বভারতীয় সভাপতি সঞ্জীব ভাই দামোর। তিনি বলেন “পরিষদ কোনওভাবেই কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে জোট গড়তে পারে না। এটা আমাদের গঠনতন্ত্র বিরোধী।” |