ট্রাইব্যুনালে সচিবের চিঠি ঘিরে জল্পনা
রাজ্যে বিদ্যুৎ-মাসুল বাড়াতে এ বার কি কেন্দ্রীয় নির্দেশ
রকার চায় না, গ্রাহকের উপরে বাড়তি মাসুলের বোঝা চাপুক। অগত্যা বাড়তি ব্যয়ের বোঝায় ন্যুব্জ হয়েও মাসুল বৃদ্ধির আবেদন জানাচ্ছে না সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা। ফলে লোকসানের ধাক্কায় রুগ্ণ থেকে রুগ্ণতর হতে হতে এখন তাদের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। যে সব রাজ্যে এমন পরিস্থিতি, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনগুলিকে কি এ বার তা হলে একতরফা মাসুল সংশোধনের নির্দেশ দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ ট্রাইব্যুনাল?
প্রশ্নটি ঘিরে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎ দফতরের অন্দরে। কারণ, লোকসানের ভারে ভারাক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এ রাজ্যের তিন সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম, বিদ্যুৎ সংবহন কোম্পানি ও বণ্টন কোম্পানি মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাবই জমা দেয়নি রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে। আর বাড়তি আয়ের রাস্তা বন্ধ থাকায় তাদের ক্ষতির বোঝা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
এবং এ হেন সঙ্কট থেকে সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ ট্রাইব্যুনাল এমন একটা নির্দেশ জারি করতেই পারে বলে মনে করছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তাদের একাংশ। উল্লেখ্য, ধুঁকতে থাকা বিদ্যুৎ সংস্থাকে জিইয়ে তুলতে এই অধিকার কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ-আইনই দিয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।
বিদ্যুৎ দফতরে এ হেন জল্পনার উৎস ট্রাইব্যুনালকে লেখা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ-সচিব উমাশঙ্করের এক চিঠি। কী আছে তাতে?
চিঠিতে উমাশঙ্কর জানিয়েছেন, অন্তত ২০টি রাজ্যের বিদ্যুৎ-মাসুল সংশোধন বিলম্বিত হয়েছে। মাসুল না-বাড়ানোয় দেশের ৩৯টি বণ্টন সংস্থার অন্তত ২২টি বিপুল লোকসানের কবলে। কেন্দ্রীয় সচিবের হিসেব বলছে, ২০০৮-০৯ সালেই বণ্টন সংস্থাগুলোর মোট ক্ষতি প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছিল। সেই পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম-সহ দেনায় জর্জরিত কয়েকটি সংস্থাকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে না। ফলে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপরন্তু বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো অর্থাভাবে ঠিক মতো কয়লা কিনতে না-পারায় মার খাচ্ছে উৎপাদন।
এমতাবস্থায় ট্রাইব্যুনালকে কেন্দ্রীয় সচিবের অনুরোধ: মাসুল-নীতির বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে ওই সব রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনগুলো যাতে নিজেরাই নতুন মাসুল ঘোষণা করে দেয়, ট্রাইব্যুনাল সেই মর্মে নির্দেশ জারি করুক।
বিদ্যুৎ সূত্রের খবর: কেন্দ্রের চিঠি পেয়ে ট্রাইব্যুনাল সব রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছ থেকে জেনেছে, মাসুল কোথায় কবে শেষ সংশোধিত হয়েছে। বিদ্যুৎকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, কিছু দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে একতরফা ভাবে মাসুল বাড়ানোরই নির্দেশ দেবে বলে এই মহলের অনেকের অনুমান।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর: ২০০০ সালের আগে এক বার এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে তখন ট্রাইব্যুনালের হাতে এমন ক্ষমতা ছিল না। তাই তখন রুগ্ণ সব ক’টি বিদ্যুৎ সংস্থার দেনা মকুব করে তাদের নতুন ভাবে কাজ শুরু করার সুযোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে শর্তও জুড়ে দেওয়া হয় যে, ফি বছর সংস্থাগুলোকে নিয়মিত মাসুল সংশোধন করতে হবে, যাতে আয়-ব্যয়ে সমতা রক্ষা করা যায়।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ বিদ্যুৎ সংস্থাই শর্ত মানেনি। তাই কেন্দ্র অন্য ব্যবস্থা নেয়। ২০০৩ সালের বিদ্যুৎ আইনের ১২১ নম্বর ধারায় রাজ্য কমিশনকে একতরফা ভাবে মাসুল বৃদ্ধির নির্দেশ জারির অধিকার তুলে দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালের হাতে। ট্রাইব্যুনাল সেই অধিকার প্রয়োগ করলে পশ্চিমবঙ্গ কী করবে? এই প্রশ্নটাও ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যুৎ দফতরে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকার রাজ্যে বিদ্যুৎ-মাসুল বাড়ানোর বিপক্ষে। এমনকী, বিদ্যুৎ সংস্থারা টাকার অভাবে কয়লা কিনতে অপারগ হওয়া সত্ত্বেও সরকার মাসুল বাড়ানোর পথে হাঁটতে রাজি নয়। এ বার কেন্দ্রীয় ট্রাইবুন্যাল একতরফা মাসুলবৃদ্ধির নির্দেশ দিলে রাজ্য কী অবস্থান নেবে? রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “ট্রাইব্যুনাল নিজে থেকে মাসুল বাড়ানোর নির্দেশ দিলে মারাত্মক ঘটনা হবে। আইনে এমন একটা ক্ষমতা দেওয়া আছে বলেই তা প্রয়োগ করা উচিত নয়।” কিন্তু রাজ্য সরকার কত দিন মাসুল না-বাড়িয়ে সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোকে আরও রুগ্ণ হয়ে যেতে দেবে? মন্ত্রীর জবাব, “বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো কমিশনে মাসুলবৃদ্ধির আবেদন করবে কি না, সেই প্রস্তাব আপাতত বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.