রাত পোহালেই জগদ্ধাত্রী পুজো প্রহর গুণছেন কাগ্রামের মানুষ
রাত পোহালেই পুজো। হোক না হেমন্ত, শুক্রবার নিস্তরঙ্গ রাঢ় বাংলার কাগ্রামে শুরু হবে মহাধামাকা। প্রায় ২৫ হাজার জনবসতির ওই বর্ধিষ্ণু গ্রাম এখন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
পঞ্চায়েত থেকে কাগ্রামের পথঘাট সাফসুতরো করার কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। গ্রামের রাস্তার মাঝে দু’ দু’টি বিশাল তোরণও ইতিমধ্যে তৈরি। বছরভর অকেজো পড়ে থাকা নিকাশি নালা, পানীয় জলের নলকূপ ও সর্ব সাধারণের ব্যবহার্য শৌচালয়ও তড়িঘড়ি সংস্কার করা হয়েছে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে। রাস্তায় ছিটানো হয়েছে ব্লিচিং পাউডার। কোথায় পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে, কোথায় অ্যাম্বুল্যান্স-সহ স্বাস্থ্য শিবির করা হবে সেই চিন্তায় ভ্রূ কুঁচকে রয়েছে কাগ্রামের।
ইতিমধ্যে দূর-দুরান্ত থেকে পসরা নিয়ে হাজির ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকে ইতিমধ্যে কাগ্রামের রাস্তাজুড়ে মেলা বসিয়ে দিয়েছেন। জন্মভিটেয় পৌঁছনোর তাগিদে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন কোনে ছনিয়ে থাকা কাগ্রামের মানুষ জন পিরতে শুরু করেছেন গ্রামে। আসলে সারা বছরের মধ্যে ওই একটি দিনই অনাবিল আনন্দের সাগরে ভাসতে থাকে কাগ্রাম। সৌজন্যে দেবী জগদ্ধাত্রী।গ্রামে মাত্র এক রাতের মধ্যেই জগদ্ধাত্রী পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী সম্পন্ন হয়। পর দিন দশমীতে গ্রামের ডজন দুয়েক প্রতিমার বির্সজন দেওয়া হয়। তবে বির্সজনের আগে রাতভর জেনারেটরের আলো জ্বালিয়ে, নানান বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে প্রতিমা নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা ওই গ্রামের পুজোর প্রাচীন রীতি। স্থানীয় ভরতপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ দেবাংশু রায়চৌধুরী বলেন, “আদিতে রায়চৌধুরীদের ও বন্দ্যোপাধ্যায়দের বাবুবাড়িতে, মুখোপাধ্যায়দের মশায়বাড়িতে ও পালবাড়িতে মোট ৩-৪টি জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন ছিল। কালক্রমে তার সংখ্যা পারিবারিক ও বারোয়ারি মিলিয়ে প্রায় দেড় ডজন ছাড়িয়ে গিয়েছে।” একদিনের পুজো হলেও ২৩টি পাড়ায় পুজো ঘিরে বসা ২৩টি মেলার আয়ু কিন্তু প্রায় দেড় সপ্তাহ। ওই পুজোর খরচও সংগ্রহ করা হয় অভিনব পন্থায়।
হাজার হাজার বিঘা ধানখেতের মাঝে কাগ্রাম। ওই ধান পাহারার দায়িত্ব নিয়ে নেয় বিভিন্ন পুজো কমিটি। তার পর ওই কমিটির পক্ষ থেকে জমিতে আগলদার নিয়োগ করা হয়। দেবাংশুবাবু বলেন, “ধান রক্ষা করার জন্য জমির মালিকের কাছ থেকে পাওয়া যায় ধান। ওই ধানের একটি অংশ আগলদারদের দেওয়া হয় তাঁদের পারিশ্রমিক বাবদ। অবশিষ্ট ধান দিয়ে পুজোর খরচ চলে।” একদা কাগ্রামের সব পুজো মণ্ডপেই পশুবলি দেওয়া হত। তবে বর্তমানে অনেক পুজো কমিটির কর্তারাই পশুবলির প্রথা বাতিল করে তার বদলে আখ, বা কুমড়ো বলি দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেছেন।
দেবাংশুবাবু বলেন, “কাগ্রামের জগধাত্রী পুজোর প্রথাটিও ভিন্ন ধরণের। এখানে নবমীর রাতেই সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো দেওয়া হয়। কাগ্রাম অমরনাথ হাইস্কুলের প্রধান করণিক শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি কাগ্রামে। তিনি বলেন, “কেবল কাগ্রাম নয়, লাগোয়া সালার, পিলখুণ্ডি, বাবলা, বহড়া ও ধর্মডাঙা-সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন পোশাক কেনেন দুর্গা পুজোর সময়ের বদলে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে। ওই সব গ্রামের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ সব গৃহস্থের বাড়িতে কয়েক দিন ঘরে অন্য এলাকার কুটুম্বরা অন্য বারের মতো এ বারও আসতে শুরু করেছেন।”
রাত পোহালেই তো পুজো!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.