নিছকই মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। এলাকায় তাঁর পরিচিতি এর বেশি কিছু ছিল না।
বুধবার, বছর কুড়ির সেই আপাত নিরীহ যুবকেরই দেহ মিলল বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলের চৌবাচ্চায়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কেন? তদন্তে নেমে অন্তত প্রথম দিন পুলিশ এর কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি।
মজনু মোল্লা অবশ্য এলাকায় বেশি পরিচিত ছিলেন আল্লা রাখা নামে। নির্বিবাদী ওই ছেলেটি সকলের কাছেই হাত পেতে চাইত ‘একটা বিড়ি দাও না!’ দাবি বলতে এটুকুই। কারও কাছে কোনও দিন এর বেশি কিছু চায়নি ওই যুবক বলেই পড়শিরা জানাচ্ছেন। এলাকার প্রায় সকলেই নিরীহ ওই যুবকটিকে তাই কিছুটা স্নেহের চোখেই দেখতেন। এ দিন তাই আল্লার মৃত্যুর খবর ছড়াতেই পথে নেমে পড়েন গ্রামবাসীরা। এমনকী ধুবুলিয়ায় তাঁর খাজুরি গ্রামের বাসিন্দারা ছাড়াও ছিলেন আশপাশের গাছা, নাকাশিপাড়ার অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারাও। এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে থেকে প্রায় ঘন্টা দুয়েক তাঁরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন। দাবি, অবিলম্বে ধরতে হবে ওই যুবকের খুনিদের। |
সারা দিন এলাকায় টো-টো করে ঘুরে বেড়ালেও রাতে সাধারনত বাড়ি ফিরে আসত ওই যুবক। তবে মাঝে মধ্যে এর ব্যতিক্রমও যে হয়নি এমন নয়। মঙ্গলবার তাই সে বাড়ি না ফেরায় বিশেষ চিন্তা করেননি তাঁর পরিবারের অন্যরা। কিন্তু এ দিন সকালেই গাছা এলাকা থেকে খবর আসে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গাছা বাজারের কাছে একটি স্কুলের পরিত্যক্ত চৌবাচ্চা পড়ে রয়েছে আল্লা রাখার দেহ।
খবর পেয়ে ছুটে যান গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু কেন তাঁকে এ ভাবে খুন করা হল, তা স্পষ্ট হয়নি কারও কাছেই। ওই যুবকের মা অছিমন বেওয়া বলেন, “ওর কোনও শত্রু ছিল না। সবাই ওকে ভালবাসত বলেই জানতাম। কেন তাকে খুন করল বলুন তো!” পরে, অবশ্য ওই যুবকের বাড়ির লোক এ ব্যাপারে গাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তাঁদের দাবি, ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ রাতে মদ্যপ অবস্থায় আল্লা রাখাকে চোর ভেবে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পরে ভুল বুঝতে পেরে ওই চৌবাচ্চায় ফেলে আসে। গাছা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ভুবন পাল অবশ্য ওই অভিযোগ উনিয়ে দিয়ে বলেন, “কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাকে আমরা সবাই চিনতাম। খামোকা ওকে ব্যবসায়ীরা খুন করতে যাবে কেন? এ সব বলে কিছু লোক এলাকার শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।” |