রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
সকাল দশটা: পিচের ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তিনি। চোখ আটকে ইডেনের বাইশ গজে। হাতের ব্যাটটা অল্প-অল্প ঝাঁকাচ্ছেন। পাশে দাঁড়ানো মনোজ তিওয়ারিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন কিছু...।
সকাল সাড়ে দশটা: মাথায় একটা ফেট্টি। প্যাড-গ্লাভস একে-একে বেরোচ্ছে ক্রিকেট-কফিন থেকে। আর অফ-স্পিনারের ‘লোপ্পা’ একটা ফ্লাইট পেতেই ক্রিজ ছেড়ে সেই ‘বাপি বাড়ি যা’...।
সকাল এগারোটা: জলের বোতলগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ দিক-ও দিক। ছুটির ঘণ্টা বেজে গিয়েছে প্র্যাক্টিসে। কিন্তু তাঁর ‘ছুটি’ কোথায়? নির্বাচকপ্রধান দীপ দাশগুপ্ত দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁর পাশে। সঙ্গে কোচ ডব্লিউ ভি রামন। ম্যাচ নিয়ে ‘মিনি-বৈঠক’? অসম্ভব নয়।
চেনা যাচ্ছে? ইনিসৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। চল্লিশে চালসে পড়া যদি গড়পড়তা বাঙালির রুটিন হয়, তা হলে তাঁর রুটিনটা আজও একটু অন্য রকম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন বহু দিন। কিন্তু বাংলার হয়ে রঞ্জিতেও সেই পুরোনো দায়বদ্ধতাটা ধরা পড়ে। বুধবার সকালে যা পড়ল। |
এক কথায়, অসম লড়াই। শক্তির বিচারে বাংলার ধারে-কাছে থাকবে না গুজরাত। বৃহস্পতিবার যাদের বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিযান শুরু করছেন মনোজ তিওয়ারিরা। বিপক্ষের টিমলিস্ট হাতড়ালে শুধু পড়ে দু’টো-একটা চেনা মুখ। পার্থিব পটেল, নীরজ পটেল..ব্যস। পাঁচ পয়েন্টের গন্ধ ম-ম করছে বাংলা ড্রেসিংরুমে। অসম যুদ্ধেও টিমে বাড়তি যোগচিহ্ন সৌরভের উপস্থিতি। ভরসার হাত এবং একই সঙ্গে টিমের ‘বড়দা’। মনোজ বলছেন। রামন বলছেন।
শুধু তাই কী? বিপক্ষ শিবিরও তো সেলাম ঠুকছে।
প্র্যাক্টিস শেষ হব-হব। হঠাৎই দেখা গেল, উল্টো শিবিরের দিকে হাঁটা দিয়েছেন সৌরভ। পার্থিবকে খুঁজে নিয়ে পিঠটাও চাপড়ে দিলেন। ন’বছর আগে যাঁর টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল সৌরভের অধিনায়কত্বে। পরে পার্থিবকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘দাদা’-র বিরুদ্ধে কী প্ল্যান নিয়ে নামছেন? সম্মানে ঝুঁকে পড়ে গুজরাত অধিনায়কের মাথা। অকপটে বলে ফেলেন, “দাদার বিরুদ্ধে প্ল্যান চলে নাকি? প্রচুর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আমার ছেলেরা বড় অনভিজ্ঞ। এত বড় ক্রিকেটার দেখেনি। চাইব ওরা কিছু শিখুক।”
বাংলা শিবির আবার এই ‘অনভিজ্ঞতা’ শব্দটা থেকেই ফায়দা তুলতে চাইছে। ঠিক হয়েছে তিন পেসার-এক স্পিনারের পরিচিত ফর্মুলা নয়, দুই পেসার, দুই স্পিনারের (রণদেব বসু-অশোক দিন্দার সঙ্গে সৌরাশিস লাহিড়ী-ইরেশ সাক্সেনা) সাঁড়াশি আক্রমণে পিষে ফেলা হবে গুজরাতকে। উইকেট দেখে শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি, টার্নিং ট্র্যাক। ক্লাবহাউসের একতলায় বসে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির শাসানি, “পাঁচ পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাব।” ব্যাটিং অর্ডার বাছাবাছির পর্বও শেষ। অরিন্দম দাস, পার্থসারথি ভট্টাচার্য, মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহা, লক্ষ্মীরতন শুক্লরা যেমন থাকেন বরাবর, আছেন। ধন্দ শুধু তিন নম্বর জায়গাটা নিয়ে। অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা না অরিন্দম ঘোষ, সেটা ঠিক হবে বৃহস্পতিবার সকালে। অধিনায়কের ভোটে। মনোজ বলছিলেন, “গুজরাতের অভিজ্ঞতা কম। চার দিনের ম্যাচে যা লাগে। মানে, আমাদেরই সুবিধা।”
বিপক্ষের হুঁশিয়ারি, পিচের চরিত্র, হোটেল-বিভ্রাট---সব দেখে গুজরাত অধিনায়কও কেমন যেন ঝিমিয়ে। হোটেল পছন্দ না হওয়ায় সাত সকালেই তা বদলাতে হয়েছে। যা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে। সিএবি কিন্তু দায় নিচ্ছে না। পরিষ্কার বলছে, গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার নির্দেশেই হোটেল ঠিক করা হয়েছিল। সঙ্গে আছে ইডেনের পিচ। এবং বিতর্কিত কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়। যিনি এ দিন পরিষ্কার হুমকিই দিলেন, পিচের কাজে কোনও দিন সাহায্য লাগলে সিএবি ছেড়েই চলে যাবেন! যা শুনে প্রবল চটেছেন সিএবি কর্তারা। যুগ্ম-সচিব বিশ্বরূপ দে বললেন, “কিউরেটর কথা কম বলে কাজটা মন দিয়ে করছেন না কেন?” যা খবর, তাতে রঞ্জি এবং টেস্টের উইকেটে বেগড়বাঁই হলে প্রবীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেতে পারে। ইডেন কিউরেটরকে তর্ক-বিতর্ক পার্থিব জানেন না। কিন্তু পিচ দেখেছেন। এবং উপলব্ধি, “শেষ ওয়ান ডে ম্যাচের মতোই উইকেট। স্লো।” আর এমন অনভিজ্ঞ টিমের অধিনয়াকত্বের চাপ? সেটা কেমন? “হুমম, চাপ তো আছেই একটা,” বলে ফেলেন পার্থিব।
এই টিমের বিরুদ্ধে পাঁচ না এলে, আর কবে আসবে? |