শেষ চেষ্টা হিসেবে সব দোষ স্বীকার করার রাস্তা নিলেন স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পাকিস্তানি পেসার মহম্মদ আমের। আমের জানিয়েছেন, অসম্ভব চাপে পড়ে তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এবং তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল স্পট ফিক্সিংয়ে অংশ না নিলে টিমে জায়গা হারাতে হবে। এ দিনই আবার তিন পাক ক্রিকেটারের এজেন্ট মাজহার মজিদ দোষ স্বীকার করে নিয়ে আদালতে জানিয়েছেন, তিনি কলঙ্কিত পাক ক্রিকেটারদের টাকা দিয়েছিলেন।
আমেরের ক্ষেত্রে এই সপ্তাহেই হবে ‘নিউটন হিয়ারিং’, যার অর্থ হল জুরিহীন আদালতে বিচারপতি কুক তাঁর শাস্তির মাত্রা ঠিক করবেন। কিন্তু তার আগে এদিন তিন অভিযুক্তকে এক সঙ্গে লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে দেখা যায়। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কাঠগড়ায় বাকি দুই সতীর্থের সঙ্গে ওঠেন আমের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী এবং উর্দু তর্জমাকারী। যা জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার চূড়ান্ত শাস্তি ঘোষিত হবে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বাটদের কারাবাস নিশ্চিত। আবার আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখা নতুন করে পাকিস্তানের ২০১০-এর ইংল্যান্ড সফর নিয়ে তদন্ত শুরু করছে। মনে করা হচ্ছে, সফরের অন্যান্য ম্যাচ নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে আলো ফেলেছেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন। বলেছেন, “২০০০ সালে করাচি টেস্টে আমরা জিতেছিলাম। দারুণ একটা জায়গা থেকে পাকিস্তান অল্প রানে শেষ হয়ে যায়। আমাদের বেশি রান তাড়া করতে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল সব কিছু ঠিক নেই।”
এই মুহূর্তে সবার নজর আমেরের দিকে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দোষ স্বীকার করে আদালতে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছিলেন আমের। তবে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী তা প্রকাশ করা হয়নি। আমেরের আইনজীবী বেন এমার্সন বলেছেন, “আমের পরিষ্কার করে দিতে চায় যে ইচ্ছাকৃত ভাবে করা দু’টো নো-বলের পুরো দায় ও নিচ্ছে। ও বুঝতে পারছে ও পাকিস্তান ক্রিকেটের কতটা ক্ষতি করেছে এবং এখন সেটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ চায়।”
আমেরের কৌসুঁলি এ কথা বললেও আদালতে পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ বলছে, এসএমএস মারফত ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে কথাবার্তা তিনি পাকিস্তানের কোনও এক নম্বরে বলেছিলেন। সেই সব এসএমএস এখন পুলিশের হাতে। তা ছাড়া আমের শুধু লর্ডস টেস্টে দু’টি নো বল করার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু আদালতে ওভালে তৃতীয় টেস্ট চলাকালীন তাঁর সন্দেহজনক কাজকর্ম নিয়েও তথ্য পেশ করা হয়েছে। গত বছরের অগস্টে ওভালে তৃতীয় টেস্ট চলাকালীন পাকিস্তানের একটি নম্বরে এসএমএস করে আমের তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়েছিলেন। সে দিনই আর একটি বার্তায় তিনি পাকিস্তানের একটি নম্বরে টেক্সট করে লেখেন, “কত দেবে এবং কী করতে হবে?” তার পর লেখেন, “এটা বাড়াবাড়ি।” আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল, একটি টেক্সট বার্তায় তিনি লিখেছেন, “তা হলে প্রথম তিনটেয় যেখানে খুশি বল করা যাবে আর পরের দুটোয় আট রান দিতে হবে?”
কাজেই যতই নিজের দোষ স্বীকার করুন, ক্রিকেটমহল মনে করছে, আমেরের পক্ষেও শাস্তি এড়ানো কঠিন হবে। |