নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ছত্রিশ বছর আগের লজ্জার সঙ্গে বুধবারের কলঙ্কের তুলনা করতে নারাজ পঁচাত্তরের দুই কুশীলবএক জন সে দিনের নায়ক হলে অন্য জন খলনায়ক! বরং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ টেনে তাঁদের মতএখন আর গোল সংখ্যাটা বিচার্য নয়। আকছার হয়।
১৯৭৫-র ৩০ সেপ্টেম্বর আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সে দিন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মোহনবাগানের জালে দু’বার বল ঢোকানো সুভাষ ভৌমিক যেমন এ দিন বললেন, “এ রকম ফলাফল সেই বিশেষ দিনটার পারফরম্যান্সের উপরই নির্ভর করে। যা খুশি তাই করে ফেলা যায়। আর গোলের সংখ্যাটা বিশ্ব ফুটবলে এখন আর বিরাট কোনও ব্যাপার নয়। তা সে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি হোক, বা মোহনবাগান। আসলে দেখতে হবে টিমটা কেমন খেলেছে। বাবলুর টিমের ডিফেন্স বলে কিছু আছে বলে তো ডেম্পো ম্যাচ দেখে মনে হল না।” মারগাওয়ের ম্যাচকে টেনে দুই প্রধানের প্রাক্তন কোচ সুভাষের আরও মন্তব্য, “ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের একটা আলাদা আবেগ থাকে দু’দলের কোটি কোটি সমর্থকের কাছে। ডেম্পো ম্যাচ তার তুলনাতেই আসে না। তবে এ দিন যে ভাবে ডেম্পো প্রচুর পাস খেলে বিনা বাধায় পরের পর গোল করে যাচ্ছিল আমার এক-এক সময় আশঙ্কা হচ্ছিল, গোল সংখ্যাটা না পাঁচ ছাড়িয়ে যায়।” |
সুভাষের মতো আশঙ্কায় ছিলেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও। এ দিনের সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো ৩৬ বছর আগের সে দিন মোহনবাগান গোলের নীচে ছিলেন ভাস্কর। চার গোল খাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়া গোলকিপারকে টেনে দাঁড় করিয়েছিলেন আজকের মোহনবাগান টিডি, সে দিন মাঠে মোহন-স্টপার সুব্রত ভট্টাচার্য। ভাস্কর বললেন, “ভারত-পাক হকি ম্যাচ আর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচ একই রকম। ভয়ঙ্কর আবেগ জড়িয়ে থাকে। পঁচাত্তরের সঙ্গে তাই এ দিনের কোনও তুলনা করব না। তবে মোহনবাগানের পাঁচ গোল খাওয়ার লজ্জাটা একই। লজ্জাটা দেখা উচিত অন্য ভাবে। গোয়ার টিমের কাছে এ ভাবে হারা! এটা তো গোটা বাংলার ফুটবলের লজ্জা। আমি তো আর এ দিন খেলিনি, কিন্তু তাতেও ভীষণ লজ্জা করছে।”
সুভাষ ও ভাস্কর দু’জনেই কিন্তু মনে করেন, মোহনবাগান টিমে ব্যারেটো-ওডাফার এ দিন না থাকাটা একটা ফ্যাক্টর। দু’জনই বললেন, “ওদের মানে বিদেশি ফুটবলার না থাকায় গোটা ডেম্পো টিম অনেক খোলা মনে খেলতে পেরেছে।”
পঁচাত্তরের পর মোহনবাগান ঘরোয়া ফুটবলে আর কখনও ৫-০ হারেনি বলেই এ দিনের স্কোরলাইন এত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। নইলে মোহনবাগান কিন্তু ভারতীয় দলের কাছে আরও দু’বার পাঁচ গোল খেয়েছে। জাতীয় লিগেই ভাস্কোর কাছে ১-৫ হেরেছে। গত বছর সুভাষ ভৌমিক কোচ থাকার সময় ইন্ডিয়ান অ্যারোজের কাছে হেরেছিল ৪-৫। সেই প্রসঙ্গ উঠলে সুভাষ বললেন, “৫-০ আর ৫-৪ এক নয়। ৫-৪ মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এ দিন মোহনবাগানের তো কোনও প্রতিরোধ বা পাল্টা গোল করার ব্যাপারই ছিল না।”
পঁচাত্তরের ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এই ডেম্পো বা সে দিনের মোহনবাগানের সঙ্গে এ দিনের বাগানের তুলনায় দুই প্রাক্তন এগিয়ে রাখছেন ৩৬ বছর আগের দিনটাকে। সুভাষ বললেন, “কোয়ালিটি ধরলে এগিয়ে রাখব আমাদের সময়ের দু’টো টিমকেই।” ভাস্করও বললেন, “পাঁচ গোল খেয়েছিলাম ঠিক। কিন্তু সে দিনের মোহনবাগান ডিফেন্স এ দিনের চেয়ে ভাল ছিল।” |