নিজস্ব সংবাদদাতা • নারায়ণগড় |
তৃণমূলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নয়। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে সম্ভব হলে সব আসনেই একাই প্রার্থী দেবে কংগ্রেস। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে এসে ফের সেই ইঙ্গিত দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তবে এ জন্য প্রদেশ নেতৃত্ব কোনও নির্দেশ চাপিয়ে দেবেন না। স্থানীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দেওয়া হবে।
প্রদীপবাবুর কথায়, “পঞ্চায়েতের নির্বাচনী কৌশল কী হবে, তা ঠিক করবেন স্থানীয় নেতৃত্ব। তাঁরা যদি মনে করেন, নিজেরাই লড়াই করতে পারবেন, লড়াই করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেস সব ধরনের মদত করবে। প্রদেশ থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না” এ দিন নারায়ণগড়ে ছিল ‘জেলা পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলন’। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা নেতৃত্ব কোন পথে হাঁটবেন, সেই দিশা দিতেই এই আয়োজন। রাজ্যে সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ সিপিএমের দখলে রয়েছে। এ দিন মানসবাবু অভিযোগ করেন, “এতদিন পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে নিঙড়ে নিয়েছে সিপিএম। এ বার সিপিএমের হাত থেকে এই ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে। তার জন্য প্রত্যেক কংগ্রেস নেতা-কর্মীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। আপনারা তৈরি হোন।” |
রাজ্যে জোট সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। কেন্দ্রেও তারা জোটসঙ্গী। তা হলে পঞ্চায়েতে জোট হবে না কেন? মানসবাবুর জবাব, “জোট ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাকেই মান্যতা দেবে প্রদেশ কংগ্রেস।” আর প্রদীপবাবুর কথায়, “আগেও তো জোট ছিল। তখনও বিভিন্ন জেলায় এমন লড়াই হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত নির্বাচন স্থানীয় ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে বিধানসভা বা লোকসভার মতো কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হবে না।” বিভিন্ন সময়ে জোটের কারণে অনেক জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। এর ফলে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরাও যে হতাশ সে কথা মেনে নিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “১৯৬২ সালে সিপিআইকে সমর্থন দিয়ে কংগ্রেস ভুল করেছিল, তা স্বীকার করতেই হবে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও ১৯টি আসনের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর মাত্র ৪টি আসন পেয়েছিল। ফলে শূন্যতা তৈরি হয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশও দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মানসবাবুর কথায়, “এ বার সুযোগ এসেছে। সকলে তৈরি হোন।”
এ দিনের সভায় সিপিএমের তুলনায় তৃণমূলের প্রতিই বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিভিন্ন এলাকাতেই তৃণমূলের লোকজন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রদীপবাবু বলেন, “নির্বাচনে তো সমর্থন দিয়েছিলাম। এখন কেন আক্রান্ত হতে হবে, বাড়ি পুড়বে, ঘরছাড়া হতে হবে।” আক্রান্ত হলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানান নেতৃত্ব। রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট ও জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন কংগ্রেস। মানসবাবু বলেন, “রাজ্যে এখন আর্থিক সঙ্কট। এখন রাজ্য সরকারের পাশে কেন্দ্রের দাঁড়ানো উচিত। আর জঙ্গলমহলে শুভেন্দু অধিকারী যে শান্তি স্থাপনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা স্বাগত। খুনের রাজত্ব বন্ধ করে উন্নয়ন করতে হবে।” |