নাম লিট্ল।
বয়স এগারো বছর ন’ মাস।
গত মাসে বেলগাছিয়ার একটি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে জরায়ুর জটিল অস্ত্রোপচার হয় তার। চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়া কুকুরটি (স্পিৎজ) এখন পেটে এগারোটি সেলাই নিয়ে রোগমুক্ত। অস্ত্রোপচারের পরে তার ওজন ৫ কিলোগ্রাম ও শরীর থেকে বাদ যাওয়া অংশের ওজন ৩ কিলোগ্রাম।
প্রাণী-চিকিৎসকেরা জানান, প্রজনন না করানো কিংবা কোনও বিশেষ কারণে বাচ্চা না হওয়ায় ওই কুকুরটির শরীরে হরমোনের অসমতা দেখা দেয়। যার ফলে জরায়ুতে পুঁজ জমতে শুরু করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ওই রোগকে ‘পায়োমেট্রা’ বলে।
এই রোগে আক্রান্ত কুকুরটিকে নিয়ে ঠাকুরপুকুরের পঞ্চাননতলার রমা চট্টোপাধ্যায় পৌঁছেছিলেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্সেস’-এ। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে প্রাণীদের নানা ধরনের চিকিৎসাও হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শল্যচিকিৎসক ও কয়েক জন ছাত্র জানান, স্পিৎজটি যখন আসে তখন পেট অসম্ভব ফোলা ছিল। তাঁদের হাতে এক্স-রে রিপোর্ট ছাড়া কিছুই ছিল না। অত্যন্ত রক্তাল্পতা ও বয়স বেশি হওয়ার জন্য অভিভাবকদের জানানো হয় নানা আশঙ্কার কথাও। |
রোগাক্রান্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে জরায়ুর জমা পুঁজ যদি যোনিদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে, তা হলে চিকিৎসার সুযোগ বেশি থাকে। কারণ, বাড়ির লোকেরা অসুস্থতার কথা সহজে জানতে পারেন। ফলে এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর সময় পাওয়া যায়। ওই রোগকে ‘ওপেন পায়োমেট্রা’ বলে। কিন্তু এই প্রাণীটির হয়েছিল ‘ক্লোজ পায়োমেট্রা’। তার জরায়ুতে পুঁজ জমতে শুরু করেছিল। ফলে অভিভাবকদের তা নজরে আসতে দেরি হয়। সাধারণত এই ‘ক্লোজ পায়োমেট্রা’-য় জরায়ুতে পুঁজ জমার পাশাপাশি কিডনির সংক্রমণ অত্যন্ত বেড়ে যায় ও হৃদযন্ত্রও বিকল হয়ে যায়।
লিটলের শল্যচিকিৎসক শ্যামল গুহ বললেন, “খুব ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়েছিলাম। শুধু একটি এক্স-রে রিপোর্ট ছাড়া আর কিছুই ছিল না হাতে। বাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো তেমন করার সুযোগ ছিল না। বাড়ির লোককেও বলে দিয়েছিলাম, সবটাই ভাগ্য। কিন্তু এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।”
প্রাণী চিকিৎসক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “স্পিৎজের ক্ষেত্রে বয়স একটা ব্যাপার। এই বয়সে তিন কিলোগ্রাম ওজনের জরায়ুর অস্ত্রোপচার ঝুঁকির তো বটেই। জমা পুঁজ থেকে শরীরে নানা সংক্রমণেরও সৃষ্টি হয়। সব পেরিয়ে এখন যে সে সুস্থ, সেটাই প্রাণী চিকিৎসার সাফল্য। তবে কয়েক দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।”
দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি প্রাণী-চিকিৎসাকেন্দ্রের তরফে রানা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বয়স ও অস্বাভাবিক ওজনের সংক্রমিত জরায়ু বিভিন্ন ক্ষেত্রে শরীরে জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। অস্ত্রোপচারের সময়েই কোনও অঘটন ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি ছিল। তাই যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন, তা নজিরবিহীন। |