দুর্গাপুজোর বিসর্জনে বিশেষ সাফাইবাহিনী নামিয়ে গঙ্গার পাড় ও জল পরিষ্কার রেখে প্রশংসা কুড়িয়েছিল কলকাতা পুরসভা। বিসর্জন নিয়ে পুরসভার আগাম পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছিল কার্যত নিখুঁত। কিন্তু বুধবার ছটপুজোর ভোরে অন্য রকম ছবি দেখা গেল রাজ্যের একমাত্র জাতীয় সরোবর রবীন্দ্র সরোবরে। ছটপুজোর উপচার ফেলা হল সরোবরের জলে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার পক্ষ থেকে কোনও রকম প্রস্তুতি ছিল না বলে অভিযোগ। তবে, পুরসভার তরফে সরোবর সাফ করা হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবরে কেবল প্রতিমা বিসর্জনই নয়, স্নানও নিষেধ। ওই নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব পুলিশের। স্থানীয় প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সংগঠন ‘রবীন্দ্র সরোবর লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। অ্যাসোসিয়েশনের নেত্রী সুমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গত দু’বছর সরোবরে ছটপুজোর সময়ে যথেচ্ছ জঞ্জাল ফেলা হয়েছে। তাঁরা এ বছর তা আটকাতে অনেক আগে থেকে মুখ্যমন্ত্রী, মেয়র, পুলিশ কমিশনার ও পরিবেশমন্ত্রীকে ৮০০ জনের সই করা চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন, যাতে সরোবরে ছটপুজোর উপচার ফেলা না হয়। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও তাঁরা বৈঠক করেন। |
সুমিত্রাদেবী বলেন, “পুলিশ এ বছর ভালই ব্যবস্থা নিয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলেও সরোবরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু, বুধবার ভোরে হঠাৎ সরোবরে আসেন তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের সামনেই ছটপুজো করতে আসা কয়েক হাজার মানুষ সরোবরে ঢুকে যথেচ্ছ ভাবে বাজি ফাটান এবং জলে কলা, তেল-সিঁদুর, দুধ, ফুল ইত্যাদি উপচার ফেলেন এবং সেখানে স্নানও করেন।”
মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য বলেন, “ছটপুজোয় পুণ্যার্থীরা কোনও কিছুই জলে ফেলেন না। কলার কাঁদি জলে ডুবিয়ে তুলে নেন। আর পাড়ে বসে পুজো করেন। জলে কেউ কিছু ফেলে থাকলে তা হয়েছে আমার অজান্তে।” তাঁর বক্তব্য, ওই অঞ্চলে আর কোনও জলাশয় নেই। তাই ছটপুজো যাঁরা করেন, তাঁরা সেখানেই ভিড় করেন।
দুর্গাপুজোর আগে গঙ্গাদূষণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময়ে পরিবশকর্মী সুভাষ দত্ত হাইকোর্টে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর উপচার ফেলার বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পরেও এ দিন পুজোর উপচার জলে ফেলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাঁরা চেষ্টা করেও পুরোটা ঠেকাতে পারেনি। তবে, এ দিন সরোবরের জল থেকে ফুল-মালা ইত্যাদি ভাসমান উপচার তুলে ফেলতে পুলিশ উদ্যোগী হয়। |