নির্মাণকাজের ধুলো থেকে যে দূষণ ছড়ায়, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাজ্যের হাতে রয়েছে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা। কিন্তু, হাওড়ায় মেট্রো রেলের নির্মাণকাজের ধুলো থেকে ছড়ানো তীব্র দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওই নির্দেশিকা কার্যকর করার কথা, সেখানকার চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ওই নির্দেশিকার বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন তিনি।
নির্মাণকাজে ধুলো থেকে যে দূষণ ঘটে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে ২০০৯ সালে রাজ্য পরিবেশ দফতর জারি করেছিল ওই নির্দেশিকা। তাতে বলা হয়েছে, ধুলোর দূষণ রোধে নির্মাণের জায়গায় ও আশপাশে মাঝে মাঝে জল ছেটাতে হবে। কাজের জায়গার ৫০ ফুট এলাকা পর্যন্ত সাফ রাখার দায়িত্বেও থাকবেন সংশ্লিষ্ট নির্মাণ-কর্তৃপক্ষ। ধুলো ওড়া কমাতে নির্মাণকাজের জায়গার পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে।
অভিযোগ উঠেছে, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের নিয়মটি মানা হলেও হাওড়ায় বাকি কোনও বিধিই কার্যকর করেননি মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকা জুড়ে রয়েছে মাটির স্তূপ। জিটি রোডের অর্ধেক ঢাকা পড়েছে মেট্রোর কাজের জন্য খোঁড়া মাটিতে। বর্ষার পরে সেই মাটি শুকিয়ে গিয়েছে। আর ক্রমাগত ধুলো উড়ছে সে সব থেকেই। কয়েক মাস ধরে সে ধুলোর ঝড়েই জেরবার হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দা এবং পথচারীরা। অথচ, গোটা ময়দান চত্বর জুড়ে এই অবস্থা চলা সত্ত্বেও মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষের কোনও রকম হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ। |
অথচ, গত বছরই মেট্রোর কাজের জন্য সুভাষ সরোবর এলাকায় একই ধরনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্ষদের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে রাজ্যের সেই নির্দেশিকা কার্যকর করেছিলেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। হাওড়ার ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগ করলে ধুলোর অত্যাচার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু পর্ষদের চেয়ারম্যান জানালেন, মাত্র চার মাস হল কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাই ওই নির্দেশিকার ব্যাপারে এখনও তেমন ওয়াকিবহাল নন।
হাওড়াবাসীকে এই বেহাল দশা থেকে নিষ্কৃতি দিতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দ্বারস্থ হয়েছেন হাওড়ারই বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। মেট্রোর কাজের জন্য ধুলো থেকে কতটা দূষণ হচ্ছে, সে কথা তিনি পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্তকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন। চিঠিতে তাঁকে অনুরোধ করেছেন, এর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পর্ষদ যেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নির্দেশ দেয়। বিনয়বাবু অবশ্য জানান, তিনি সুভাষবাবুর চিঠি এখনও হাতে পাননি। তা পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
এ দিকে, কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশনের হাওড়ার ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুজন কাঞ্জিলাল বলেন, “বর্ষায় এই সমস্যা ছিল না। সম্প্রতি ধুলোর সমস্যা শুরু হচ্ছে। ধুলো কমাতে আমরা এয়ার সাসপেনশন সিস্টেম ব্যবহার করব এবং জল ছেটাব।”
সুভাষবাবু অবশ্য পর্ষদের পুরো নির্দেশিকা মেনে চলার পক্ষে। তিনি বলেন, “কেবল জল ছেটালেই হবে না, মাঝেমধ্যে রাস্তার ধুলো ঝাঁট দিয়ে সরাতে হবে। বর্ষায় ধুলো কাদায় পরিণত হলে, মাঝেমাঝে তা সরানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। মাটির ঢিপি ধসে যাতে রাস্তায় চলে না আসতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে চট দিয়ে মাটির স্তূপ ঢেকে রাখারও ব্যবস্থা করতে হবে।” হাওড়ায় মেট্রোর কাজের জন্য ধুলো থেকে ছড়ানো দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ অচিরেই শুরু হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষ। |