‘উদার’ হলে দলের সঙ্কটই বাড়বে, বার্তা দিলেন কারাট
তাদর্শ ‘সময়োপযোগী’ করতে গিয়ে তিনি যে দলের শ্রেণি-চরিত্র বদলাতে রাজি নন, আরও এক বার জানিয়ে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। কারাটের বক্তব্য, কেউ চাইলেও ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির মতো সিপিএমও মার্ক্সবাদী সত্তা বিসর্জন দিয়ে শুধুই সমাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক দলে পরিণত হোক, তা হচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গে হারের পর বুদ্ধদেব ভট্টার্চায চাইছেন, সিপিএম তার গোঁড়ামির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। দলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা হোক। পার্টির বাইরের সমমনোভাবের মানুষও তাতে অংশ নিক। একই কথা বলছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রও। কিন্তু উদার হতে গিয়ে দলের মূল চরিত্র বদলে ফেলার পক্ষে নন কারাট। তাঁর সাফ কথা, “পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বামফ্রন্টের হারের পরে কমিউনিস্টদের ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে সিপিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কথাই লেখা হচ্ছে। এর অনেকটাই সাংবাদিকদের অতিশয়োক্তি।”
পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে হারের ফলে জাতীয় রাজনীতিতেও কোণঠাসা সিপিএম। সংসদে শক্তি কমায় অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছেন দলের মুষ্টিমেয় সাংসদরা। চিরাচরিত তিন বাম-শাসিত রাজ্যের বাইরে পা ফেলার চেষ্টাও ব্যর্থ হচ্ছে। সিপিএমের অনেকেই তাই মনে করছেন, ১৯৯৬ সালে সিপিএমেরও উচিত ছিল কেন্দ্রের যুক্তফ্রন্ট সরকারে যোগ দেওয়া। সে সময় জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব এলেও, কারাটদের বিরোধিতায় পিছু হঠতে হয় জ্যোতি বসু-হরকিষেণ সিংহ সুরজিতকে। আবার ২০০৪ সালেও বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে সরকারে যোগ দেয়নি। ফলে একশো দিনের কাজের মতো বামেদের মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকল্প তৈরি করে ভোটবাক্সে সুফল কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। সম্প্রতি ইতিবাসবিদ রামচন্দ্র গুহও সেই মত প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সিপিএম কি এখনও পার্টি নিয়ন্ত্রিত একদলীয় সরকারে বিশ্বাস করে? সেই জন্যই কি তারা জাতীয় স্তরে জোট সরকারে অংশ নেয় না?
এর জবাবে কলম ধরে কারাট জানিয়েছেন, সিপিএমের সামনে আসল বিষয় হল, বিকল্প নীতি কার্যকর করার মতো সংসদের ভিতরে-বাইরে প্রয়োজনীয় শক্তি দলের রয়েছে কি না। তা না থাকলে বুর্জোয়া দলগুলির জোট-সরকারে মাথা গলিয়ে কোনও লাভ হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কার করতে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। জাতীয় স্তরে সীমিত শক্তি নিয়ে জোট-সরকারে থেকে তা সম্ভব নয়। এখানেও সেই ইতালির উদাহরণ দিয়ে কারাট বুঝিয়েছেন, ইতালির কমিউনিস্ট পার্টি ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও কোনও দিন জোট-সরকারে মাথা গলাতে পারেনি। এর পিছনে অবশ্য ছিল আমেরিকার চাপও। কমিউনিস্ট পার্টির বদলে নিজেদের গণতান্ত্রিক পার্টি বলে ঘোষণা করার পরেই তারা জোট-সরকারে ঢোকে। আর এক দল, কমিউনিস্ট রেভলিউশনারি পার্টি নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র বিসর্জন না দিলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের ভিতরে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি। ফল কী হয়েছে? ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইতালির সংসদে কমিউনিস্ট পার্টির কোনও সাংসদ মনোনীত হননি। ইতিহাসে এই প্রথম।
কারাটের ভাষায়, “ভারতীয় কমিউনিস্টদের কাছে এটা একটা সতর্কবাণী।” দলকে বেশি উদার করতে গিয়ে শ্রেণি-চরিত্র বদলে ফেললে অস্তিত্বের সঙ্কট আরও বাড়বে বলেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বার্তা দিলেন কারাট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.