স্তালিনের শিক্ষা
পোষা চন্দনাকে ফিরিয়ে এখন শয্যা-বন্দি সুধাংশু
পার্টি কমরেডদের অনেকেই বিরক্ত। অনেকে বলেছেন, ওকে বার করে দেওয়া উচিত!
জোসেফ স্তালিনের আদর্শে দীক্ষিত নেতা করতে পারেননি।
বহাল তবিয়তে এখনও তাঁর বাড়ির দাঁড়ে বসে আছে ‘চন্দনা’। উত্তর কলকাতার নিমতলা লেনে তাঁর বাড়িতে ঢুকতে গেলেই দোতলার উপর থেকে চিৎকার করছে, “কে, কে, কে!” সময় মতো ‘লাঞ্চ’, একবাটি ছোলা না পেলে চিৎকার করে বিরক্তিও প্রকাশ করছে আগের মতো।
ওই চন্দনার জন্যেই নেতা এখন শয্যা-বন্দি। লক্ষ্মী পুজোর সকালে খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া পাখিকে বিড়ালের থাবা থেকে বাঁচাতে গিয়ে পড়ে আহত তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে যখন নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন ‘কৃতকর্মের’ জন্যে ‘মরমে মরে থাকা’ চন্দনাটিকে তার খাঁচায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্যকারীদের অনুরোধ করেছিলেন তিনি। ‘ঘনিষ্ঠ’ কমরেড অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরক্ত গলায় বলেছিলেন, “ছাড়ো তো। ওকে উড়ে যেতে দাও।” নেতা মানেননি।
মানেননি। কারণ তিনি জোসেফ স্তালিনের পাঠশালার মনোযোগী ছাত্র। যিনি বলেছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে এক দল মানুষ আছেন, যাঁরা ভালবেসে পার্টিতে এসেছিলেন। তাঁরা পার্টির একাংশের খবরদারিতে হাঁফিয়ে উঠে পার্টি ছেড়ে পালিয়ে যেতে চান। এই ধরনের লোকেদের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করে পার্টিতে ধরে রাখতে হবে। কারণ, তাঁরাই দলের ভবিষ্যৎ। স্তালিন-শিষ্য নেতা বলছেন, “আমার চন্দনাটাও এই গ্রুপের। ওর সঙ্গে আমার একটা আত্মিক যোগ আছে। কী করে ওকে ছেড়ে দেব! বা ওর উপর রাগ করে থাকব!”
চিত্রণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
নেতার নাম সুধাংশু শীল। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ। অধুনা কলকাতা পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নিজের বিছানায় কোনওরকমে বালিশে ভর দিয়ে বসে যিনি বললেন, “লক্ষ্মীপুজোর দিন সকাল ন’টা হবে। খাঁচার দরজা ঠোঁট দিয়ে খুলে পাখিটা উড়ে গিয়ে বসেছিল পাশের বাড়ির ছাদের পাঁচিলে। সেই বাড়ির চিলেকোঠার কার্নিশে ওত পেতে ছিল বেড়ালটা। দেখেই কালক্ষেপ না-করে আমাদের বাড়ির ছাদের পাঁচিল টপকে পাশের বাড়ির ছাদে গিয়ে পাখিকে উদ্ধার করি।”
কিন্তু যখন পাখিকে তোয়ালেতে মুড়ে তিনি নিজের বাড়ির পাঁচিলের দিকে এগোচ্ছেন, তখনই দুর্ঘটনা। সুধাংশুবাবুর পা পড়ে পাশের বাড়ির বাথরুমের ছাদে লাগানো গ্লাস ফাইবারের উপর। সেটা ভেঙে প্রায় ১০ ফুট নীচের বাথরুমে সটান পতন। ঠিক মূর্চ্ছা না-গেলেও কোমরের পাশে পেলভিসের হাড় সরে যায়। হাত-পা কেটে প্রচুর রক্তপাতও। প্রচন্ড শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। এক সপ্তাহ নাসির্ংহোমে কাটানোর পরে এখন বাড়িতে ফিরলেও হাঁটা-চলার উপায় নেই। এখনও তিন মাস তাঁকে এ ভাবেই কাটাতে হবে। কিন্তু চন্দনার উপর তবু সুধাংশুবাবুর রাগ বা বিরক্তি নেই।
কেন নেই?
সুধাংশুবাবু বলেন, “আমি তো স্তালিনের ‘পার্টি সংগঠন’ পড়েছি। স্তালিন বলেছেন, পার্টিতে চার ধরনের লোক থাকে। এক দল আছেন তাত্ত্বিক। তাঁদের জনসংযোগ থাকে না। এঁদের পার্টি-দরদি হিসাবে দেখা উচিত। এক দল আছেন বয়েসের ভারে ন্যুব্জ। কিন্তু নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে উপদলীয় কার্যকলাপে মদত দিয়ে থাকেন। তৃতীয় দলের লোকেরা পার্টিতে খবরদারি করে। আর চতুর্থ ধরনের লোকেরা ভালোবেসে পার্টিতে আসে। তারা ওই তৃতীয় শ্রেণির খবরদারিতে বিরক্ত হয়ে পার্টি ছেড়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু তাদের ধরে রাখতে হয়। কারণ, তারাই দলের ভবিষ্যৎ।”
তিনি কি চন্দনা-কাহিনির মারফৎ এই ‘পরিবর্তনের’ পরিমণ্ডলে ঘুরে দাঁড়াতে পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে-নেওয়া কমরেডদের ধরে রাখার বার্তা দিচ্ছেন? সুধাংশুবাবু হাসতে হাসতে বলেন, “আরে নাহ্! ছেলে শুভ্রাংশুর শখে দু’টি চন্দনা, কয়েকটা বদরি, রঙিন মাছ এবং ডিম্পি নামে একটি পাগ (কুকুর) পোষ্য আছে বাড়িতে। এদের মধ্যে ডিম্পি আর ওই চন্দনার সঙ্গে আমার ভারি ভাব। চন্দনার সঙ্গে অনেক কথা, খুনসুটি হয়। ওর খাবার পেতে দেরি হলে আমাকেই ও অনুযোগ করে। খাবার বাটি ঠোঁটে তুলে আমায় দেখায়। খাবার পেলে তবে শান্ত হয়।”
দুঃখের কথা-টথা চন্দনাকে বলেন? ১৩ মে বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে? হাসেন সুধাংশুবাবু। বলেন, “নাহ্, তা নয়। ওই যে বললাম, স্তালিনীয় শিক্ষা। পার্টির মতো পরিবারে সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।”
তাই, তাঁর বাড়ির দোতলায় খাঁচার দাঁড়ে দাঁড়িয়ে এখনও চন্দনা কলকলিয়ে যায়। সুধাংশুবাবু হাসেন। বলেন, “আমাদের তো কেউ কেউ পাঁচ বছর চুপ করে থাকতে বলছে। চন্দনাটা তো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। করুক না!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.