|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে প্রার্থী সেই সুব্রত বক্সী |
দেবারতি সিংহ চৌধুরী |
তাঁর নিজের ছেড়ে যাওয়া লোকসভা কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে সুব্রত বক্সীর নামই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং একই সঙ্গে উস্কে দিলেন পূর্ত ও পরিবহণ মন্ত্রিত্ব নিয়ে জল্পনাও।
বুধবার দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চেই মমতা বলেন, “দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের জন্য সুব্রত বক্সীর নাম ঘোষণা করছি। আমাকে জেতানোর জন্য ও ভবানীপুরের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিল। নিজের ঘর ফাঁকা করে দিয়ে আমায় দাঁড়াতে দিয়েছিল। আমি তাই এ বার ওর ঘরটা ওকে ফিরিয়ে দিলাম। বক্সী থাকা মানেই আমি থাকা।”
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতার বরাবরের ‘আস্থাভাজন’ সুব্রতবাবু। দলের রাজ্য সভাপতি হলেও তিনি বরাবর যথেষ্ট ‘লো-প্রোফাইল’। নেত্রীর আশেপাশে মুখ দেখানো দলীয় প্রতিযোগিতায় তাঁকে কখনও দেখা যায় না। কার্যত নীরবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পূর্ত ও পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দফতরের মন্ত্রী হিসেবেও গত পাঁচ মাসে সুব্রতবাবুর কাজে যথেষ্ট খুশি ছিলেন মমতা। তাঁর ‘কাজ শিখতে চাওয়া’র মনোভাব মহাকরণের আমলাদেরও প্রশংসা পেয়েছে।
তবে শেষমেশ যে দক্ষিণ কলকাতায় সুব্রতবাবুকেই টিকিট দেওয়া হবে, তা বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই ঠিক ছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই ঠিক ছিল মমতা সুব্রতবাবুর ভবানীপুর থেকে বিধানসভায় যাবেন। আর সুব্রতবাবু দক্ষিণ কলকাতা থেকে দিল্লি যাবেন। মূলত সে কারণেই গত বছর দিল্লির একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন সুব্রতবাবু। কিন্তু মাঝখানে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে ‘মমতাপন্থী’ এক বিশিষ্ট জনের নাম শোনা গিয়েছিল। আবার মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও কৌশলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিপিএমের তরফে। অন্য নামের ‘আনাগোনা’য় তাই মাঝখানে একটা সময় ঈষৎ ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়েছিলেন সুব্রতবাবু। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, তিনি বরং দলের সংগঠনের কাজটাই মন দিয়ে করতে চান। দিল্লিতে যেতে চান না। কিন্তু কখনওই এ ব্যাপারে তিনি মমতাকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। সম্ভবত নেত্রীর প্রতি তাঁর আস্থার কারণেই। |
|
লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সুব্রত বক্সীর নাম ঘোষণা করছেন
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: অশোক মজুমদার |
ভোটের আগে দেওয়া কথার নড়চড় করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে দক্ষিণ কলকাতায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে সুব্রতবাবুর নাম ঘোষণা করেছেন মমতা। ঘোষণার পর মঞ্চে সকলের সামনে দীর্ঘদিনের সহকর্মী সুব্রতবাবুর হাতও তুলে ধরেন দলনেত্রী। পরে সুব্রতবাবু বলেন, “মানুষের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেছি। দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে আমাকে মনোনীত করে যে দায়িত্ব তিনি আমাকে দিলেন, নিশ্চয়ই তা-ও একই রকম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।”
সুব্রতবাবুর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে সম্ভাব্য পূর্ত ও পরিবহণ মন্ত্রী নিয়ে। সেই জল্পনায় একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোনওটাই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নেবেন মমতা নিজে। কিন্তু পূর্ত ও পরিবহণের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দু’টি দফতরে যে তিনি তাঁর ‘আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠ’ কাউকে বসাতে চান, তা স্পষ্ট।
পূর্ত দফতরের জন্য তৃণমূলে জল্পনা চলছে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নামে। শোভন মমতার ঘনিষ্ঠ তো বটেই, তিনি বেহালা থেকে নির্বাচিত। দলের মধ্যে শোভনের সঙ্গে পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের একটা ‘অম্ল-মধুর’ সম্পর্ক রয়েছে। ববি মন্ত্রী হওয়ায় তিনি শোভনের চেয়ে মর্যাদায় খানিকটা এগিয়ে। ফলে শোভনকেও মন্ত্রী করে মমতা দুই তরুণ নেতাকে ‘সম-মর্যাদা’ ভুক্ত করতে পারেন।
তবে মন্ত্রী হলে শোভনকে মেয়রের পদ ছাড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে মমতা কাকে মেয়র করবেন, তা-ও জল্পনার বিষয়। শেষ পর্যন্ত শোভন মন্ত্রী না-হলে জল্পনা চলছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রতবাবুকে নিয়ে। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রতবাবুর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সংশয়াতীত। মেয়র থাকাকালীন ‘ঠিকাদার সামলানো’ অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে।
পরিবহণ দফতর নিয়ে দু’টি নাম শোনা যাচ্ছে। প্রথম, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। প্রতিমন্ত্রী হলেও ক্রীড়া দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মদনবাবুকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরিবহন দেওয়া হতে পারে। ট্যাক্সি-সহ বিভিন্ন যানবাহন কর্মীদের নিয়ে আন্দোলন করায় পরিবহণ ক্ষেত্রে মদনবাবুর একটা ‘প্রভাব’ রয়েছে। তবে ঘটনাচক্রে এখন মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও রয়েছে মদনবাবুর উপর। ফলে ওই দুই দফতরের সঙ্গে পরিবহণের পূর্ণ দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হলে তাঁর উপর ‘অতিরিক্ত চাপ’ পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। তাই ক্রীড়া ও মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁকে শুধুমাত্র পরিবহণের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন দলের একাংশ। মৎস্য দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব তৃণমূলের চার প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কেউ সামলাতে পারেন। মদনবাবুকে পরিবহণের পূর্ণ দায়িত্ব দিলে ক্রীড়ামন্ত্রী হতে পারেন বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু। যিনি একদা প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ভাবশিষ্য’ হওয়ার সুবাদে ময়দান-সহ বিভিন্ন ক্লাব ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। দলের এক শীর্ষনেতার তিনি অতন্ত ‘স্নেহভাজন’ও বটে। তবে ক্রীড়া দফতরের জন্য দলের বিধায়ক তাপস রায়ের নামও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের একাংশ।
সুব্রতবাবুকে বাদ দিলে আপাতত মমতার মন্ত্রিসভায় ৪২ জন মন্ত্রী রয়েছেন। যে সংখ্যা সর্বাধিক হতে পারে ৪৪। ফলে দু’টি জায়গা খালি থাকছে। কিন্তু যে ভাবে জল্পনা শুরু হয়েছে, তাতে আপাতত মুখ্যমন্ত্রী নতুন কাউকে না-এনে ওই দু’টি দফতর নিজের হাতেই রাখতে পারেন। আগামী বছরের শুরুতে মন্ত্রিসভায় রদবদল করার ইচ্ছে রয়েছে মমতার। তত দিন পর্যন্ত তিনি ওই দফতর দু’টি নিদের হাতেও রাখতে পারেন। তাতে এক দিকে যেমন দলের ভিতরে জল্পনা কমবে, তেমনই মমতাও মনস্থির করতে আরও সময় পাবেন। |
|
|
|
|
|