লক্ষ্মীপুজো গেল। গেল ভাইফোঁটাও। নভেম্বরের গোড়াতেই শীতের হাল্কা আমেজ। কিন্তু বাজারে গেলেই শীত ভাবটা আর থাকছে না। হঠাৎ করে ফের শাক-সব্জির দাম বেড়ে যাওয়ায় টান পড়ছে ক্রেতাদের পকেটে। শীতের সব্জি এ বার কিছুটা আগেই চলে এসেছে বাজারে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে থাকছে না কোথাও। তবে সব্জি-বিক্রেতা এবং কৃষকদের আশ্বাস, ঠান্ডা আর একটু বাড়লেই প্রচুর সব্জি আসবে বাজারে। দাম তখন এমনিতেই কমে যাবে।
পুজোর পরে পরেই বাজারে চলে এসেছিল ফুলকপি। ২৫ টাকা জোড়ায় তা মিলছিল সব বাজারেই। কলকাতার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেল, সেই ফুলকপিই এখন বিকোচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা জোড়ায়। ধাপার ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা জোড়ায়। ধাপার ওলকপিও এসে গিয়েছে। দাম ৩০ টাকা জোড়া। বেগুনের দাম ৩০-৪০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। মুলো ৩০ টাকা। বরবটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টোম্যাটোর দাম ৪০ টাকা। বেশির ভাগই রাঁচির। দেশি টোম্যাটো ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দিল্লির বিট, গাজরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বসিরহাটের বিট, গাজর। ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে তার দাম ঘুরছে। |
কোলে মার্কেটের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, “অন্যান্য বছর এই সময়ে রাজ্যের বাইরের ফুলকপি, বাঁধাকপি দিয়েই আমরা কাজ চালাই। এ বার ইতিমধ্যেই বাজারে এসে গিয়েছে দেশি ফুলকপি, বাঁধাকপি এমনকী শিমও। তবে দাম বেশি। সেই জন্যই বাজার চড়া বলে মনে হচ্ছে।” মানিকতলা বাজারের সব্জি-বিক্রেতা অতুল মাইতি বলেন, “দেশি সব্জি আসায় আমরা বাইরের সব্জি তেমন নিচ্ছি না। এখন চড়া দামেই দেশি সব্জি বিক্রি করছি।”
কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “অতিবর্ষণে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সব্জির দাম খুব বেড়ে গিয়েছিল। এ ভাবে বৃষ্টি চললে শীতের সব্জির ফলন কী হবে, তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। প্রথমে লাগানো ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো নষ্ট হয়েছিল অনেকটা।”
কিন্তু সেপ্টেম্বরের পরে বৃষ্টি আর না হওয়ায় সেই আশঙ্কা কেটে গিয়েছে বলে জানান উত্তমবাবু। তাঁর মন্তব্য, “শীতের ফসল গত দেড় মাসে বেশ ভাল হয়েছে। পাইকারি বাজারে স্থানীয় সব্জি আসছে। কিছু দিনের মধ্যেই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।”
গত কয়েক বছর রাঁচি-দিল্লির সব্জি দিয়েই নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চালাতে হয়েছিল কলকাতার সব্জি-বিক্রেতাদের। এ বার কিছুটা ব্যতিক্রম। ‘পশ্চিমবঙ্গ ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশন’-এর ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট কমল দে বললেন, “কড়াইশুঁটি ছাড়া অন্য সব শীতের সব্জি এখন এ রাজ্য থেকেই আসছে। আমরা কড়াইশুঁটি আনছি রাঁচি থেকে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। কয়েক সপ্তাহ পরে নদিয়ার কড়াইশুঁটিও স্থানীয় বাজার থেকে আসতে শুরু করবে।”
সব্জি-বিক্রেতাদের মতে, শীত পড়তে না পড়তেই স্থানীয় আনাজ চলে এসেছে। এই ধারাই বজায় থাকবে বলে তাঁরা আশা করছেন। জোগান ক্রমশ বাড়বে। কয়েক সপ্তাহ পর থেকে চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি হবে। ফলে গোটা শীত জুড়ে সব্জির দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছেন কলকাতার সব্জি-বিক্রেতারা। |