প্রশ্ন যাত্রী-স্বার্থ নিয়ে
লোকসান এড়াতে ভোর ও রাতে কমছে সরকারি বাস
‘জনস্বার্থে’র যুক্তিতে রাজ্যে বিদ্যুতের মাসুল বাড়ছে না, বসছে না জলকর। কিন্তু পরিবহণ সংস্থার ক্ষেত্রে এই নীতি থেকে সরে এল রাজ্য সরকার। লোকসান কমানোর প্রথম ধাপ হিসেবে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিএসটিসি-র গভীর রাত ও ভোরের বাস। যে বাস রুটগুলি এর আওতায়, তার মধ্যে রয়েছে হাওড়া ও শিয়ালদহগামী কিছু বাস। ওই বাসগুলির যাত্রীদের একটা বড় অংশ ট্রেনযাত্রী এবং রাতের নিত্যযাত্রীরা। ওই সময়ে ফাঁকা রাস্তায় তাঁদের অসুবিধায় ফেলে এ ভাবে বাস কমিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
পর্যাপ্ত যাত্রী হয় না, এই যুক্তিতে গভীর রাত ও ভোরে বাস কমিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য এই মর্মে ডিপো ম্যানেজারদের কাছে সার্কুলার পাঠিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, লোকসান কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। অথচ ওই সময়ে বিকল্প যানবাহন থাকে না বললেই চলে। তখন সিএসটিসির ওই বাসগুলির উপরেই ভরসা করেন মানুষ।
সিএসটিসি সূত্রের খবর, মাসখানেক আগেও বিভিন্ন ডিপো থেকে রাতে সংস্থার ৩৬টি বাস হাওড়া, শিয়ালদহ-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করত। সংস্থা সূত্রের খবর, এখন সংখ্যাটি কমিয়ে ১৫-তে নামানো হয়েছে। কোন কোন রুটের বাস এ ভাবে কমানো হচ্ছে? সিএসটিসি-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সল্টলেক-হাওড়া, সল্টলেক-শিয়ালদহ, নীলগঞ্জ ডিপো-হাওড়া, বেলঘরিয়া-হাওড়া, বেলঘরিয়া-ব্যারাকপুর এ সব রুটে কোপ পড়েছে বেশি রাতের বাসে। ওই সব বাসে সরকারি পরিবহণকর্মীদের অনেকে বাড়ি ফিরতেন বা রাতের শিফ্টে অফিসে আসতেন। ওদের এবং যাত্রীদের একাংশের কিছু অসুবিধা হতে পারে।”
সিএসটিসি-র সিটু কর্মী সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “বেলঘরিয়া-সহ কিছু ডিপো থেকে ভোর, বেশি রাতে বাস কম চালানো শুরু হয়েছে। বছর দুই আগেও সংস্থার বিভিন্ন রুটের বাস দৈনিক দেড় লক্ষ কিলোমিটার চলত। এখন চলে এক লক্ষ কিমি-র মতো। বছরখানেক আগেও মাসে টিকিট বিক্রি হয়েছে মোট সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে হয়েছে ৪ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা।”
সিএসটিসি-র লেক ডিপো থেকে ভোর চারটে চল্লিশে ১২টি রুটের বাস যায় বিভিন্ন ডিপোয়। সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে ছাড়ে। বেলগাছিয়া ডিপো থেকেও এ ভাবেই রাতের বাস পরিষেবায় নামে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই সময়ে বাসগুলিতে যাত্রী নামমাত্র হওয়ায় টিকিট বিক্রি করে আয় হচ্ছে না। অথচ, তেল ও যন্ত্রাংশের খরচ বাড়ছে। সংস্থার চেয়ারম্যান তারাপদ মাঝি বলেন, “ঠিক হয়েছে, সকাল আটটার আগে ও রাতে কিছু রুটে দশটার পরে, কিছু রুটে এগারোটার পরে বাস কমানো হবে। তবে, বিশেষ বিশেষ রুটে ওই সময়ে বিভিন্ন ডিপো থেকে বাস ছাড়বে।” যেমন তিনি জানান, ৭এ রুটের বাসে সকাল আটটা পর্যন্ত যাত্রী হয় যৎসামান্য। এ রকম বেশ কিছু রুটে দু’টি বাসের সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হচ্ছে।
২০১০-১১ অথর্বর্ষে সিএসটিসি-র জন্য সরকারি ভর্তুকি হিসেব করা হয় ১২৮ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। বছর শেষে তা বেড়ে হয় ১৫২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। চলতি অর্থবর্ষে তা অন্তত সওয়া ছ’শো কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। তারাপদবাবু জানান, “এই অবস্থায় সংস্থার ব্যয়সঙ্কোচে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। তার অন্যতম বেশি রাতের ও ভোরের বাস কমিয়ে আনা।”
তবে, যাত্রী-স্বার্থে ভোর বা রাতের সরকারি বাস পরিষেবা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে না বলে জানান পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী। সেইসঙ্গে বলেন, “সরকারি নিগমগুলো ধুঁকছে। তাদের জন্য অর্থ দফতরের পক্ষে ক্রমাগত এত টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন নিগমকে বলা হয়েছে আয়বৃদ্ধি ও ব্যয়সঙ্কোচ করে স্বাস্থ্য ফেরানোর চেষ্টা করতে।”
অর্থাভাবে সিএসটিসি-র প্রচুর বাস মেরামতি হচ্ছে না। যেগুলি চলছে, তেল-বাবদ খরচ বাড়ছে। তাই, মূলত ব্যস্ত সময়ে বাস চালাতে ডিপোগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে এক বারে নয়, যে সব রুটে রাতে ও ভোরে ভিড় কম, ধীরে ধীরে সেগুলিতে বাস কমানো হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.