২০০০ সালের শেষের দিকে গ্রামে যখন বিদ্যুৎ পৌঁছল তখন খুশি হয়েছিলেন ওঁরা। ওঁরা বলতে দুবরাজপুরের রাধামাধবপুরের আদিবাসীরা। কিন্তু সেই আনন্দ বছর খানেকের বেশি স্থায়ী হয়নি। পর পর দু’বার বিদ্যুতের তার চুরি হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে আছে গ্রামটি।
তার পর থেকে কেটে গিয়েছে ৮-৯ বছর। বিদ্যুৎ আর আসেনি। এর মধ্যে চুরি হয়ে গিয়েছে গ্রামের ট্রান্সফর্মারের যন্ত্রাংশ। স্বাভাবিক ভাবে গ্রামে বিদ্যুৎ আসবে সেই আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের ক্ষোভ, বহুবার সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। অথচ গ্রাম থেকে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্থানীয় ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, রাধামাধবপুর দুবরাজপুর ব্লকের চিনপাই পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত একটি গ্রাম। প্রায় শ’দুয়েক মানুষের বাস এই গ্রামে। দুবরাজপুর ব্লকের পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরেও ৮-৯ বছর ধরে বিদ্যুৎ নেই। কেন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই। ওই গ্রামের বাসিন্দা বুলু ওরাং, লালু ওরাং, তপন ওরাংরা বলেন, “বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছিল ৯ বছর আগে। কিন্তু তা তো হতেই পারে। তাই বলে আর বিদ্যুৎ সংযোগ পাব না এটা কেমন যুক্তি।” তাঁদের ক্ষোভ, “পড়াশোনা থেকে বাড়ির কাজ সব ক্ষেত্রেই চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। এমনকী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য যে যন্ত্র প্রয়োজন নেই ফোন চার্জ দিতে তিন কিলোমিটার দূরে চিনপাইয়ে যেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়া টিভি দেখা সম্ভব নয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও টিভি কিনতে পারিনি।” |
পড়ে আছে বিকল ট্রান্সফর্মার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
গ্রামবাসীরা জানান, বহু বছর ধরে ট্রান্সফর্মারটি তাঁরা আগলে রেখেছিলেন। বছর তিনেক আগে সেটিও চুরি হয়ে গিয়েছে। নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের সাধন ঘোষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এমনকী মাস তিনেক আগে এলাকা পরিদর্শনে আসা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস কাছে গ্রামবাসীরা এই সমস্যার কথা বলেছেন। কিন্তু কোনও তরফ থেকে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর দাবি, গ্রামে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েও আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিট ফল শূন্য। গ্রামবাসী কার্তিক ওরাং, উর্মিলা ওরাংরা বলেন, “বিদ্যুৎ হলে এই গ্রামে আরও একটি সুবিধা হয়। গ্রামে একটি নাচগানের দল আছে। যাঁরা সারাদিনের কাজের শেষে একটু ভালভাবে সেই সব নাচগান ঝালিয়ে নিতে পারেন।” বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সাধনবাবু বলেন, “একাধিক বার তার চুরি যাওয়ায় বার বার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তবে গ্রামে যাতে বিদ্যুৎ পৌঁছয় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। কিন্তু রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনায় ওই গ্রামের নাম না তুলতে পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ নতুন করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ কাগজে কলমে ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। তবে সেখানে যাতে খুব শীঘ্রই বিদ্যুৎ পৌঁছয় সেটা দেখা হচ্ছে।’’ |