সিউড়ির হোম-কাণ্ডে ধৃতদের জামিন
নড়েচড়ে বসল পুলিশ, বিসর্জন কালী প্রতিমার
রকারি হোমে তাণ্ডবের পরে চোখ খুলল পুলিশের।
পুলিশের ‘গুঁতোয়’ সিউড়ির দু’টি কালীপুজো উদ্যোক্তারা বুধবার সাত সকালেই কার্যত নিঃশব্দে প্রতিমা বিসর্জন দিলেন। শোভাযাত্রা না করে দু’টি প্রতিমা নিয়ে গিয়ে তিলপাড়ার ময়ূরাক্ষী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হল। মঙ্গলবার রাতে একটি কালী প্রতিমা বিসর্জনের সময় সিউড়ির সরকারি হোমে ভাঙচুর চালায় একদন যুবক। তারপরেই শহরের বাকি প্রতিমাগুলি বিসর্জন দেওয়ার জন্য পুলিশ রাতেই সেই সব উদ্যোক্তাদের চাপ দেয়। সরকারি হোমে ভাঙচুর করার ঘটনায় পুলিশ সেই রাতেই তিন জন যুবককে গ্রেফতার করে। ধৃতেরা হল জীবন দে, সুভাষ দাস ও লক্ষ্মীপদ দাস। সিউড়ি শহরের রামকৃষ্ণপল্লীতে তাদের বাড়ি। বুধবার ধৃতদের সিউড়ি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের অর্ন্তবর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
ভাঙা কাচের ওপারে তখনও আতঙ্ক। বুধবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশের হিসেবে সিউড়ি শহরে পারিবারিক, মন্দির ও বারোয়ারি মিলিয়ে প্রায় ২০৫টি জায়গায় কালীপুজো হয়। পুলিশ গত শনিবারের মধ্যেই কালী প্রতিমা বিসর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, তা যে পালন হয়নি, মঙ্গলবার রাতে ওই সরকারি হোমে ভাঙচুরের ঘটনায় প্রমাণিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বস্তুত শনিবার থেকেই কালী প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। তার আগে কয়েকটি মাত্র প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন নিয়ে নির্দেশ লঙ্ঘন হওয়ার পরে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল কী? পুলিশের কাছ থেকে এর কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় নি। জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “শহরের সব ক’টি কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে বলা হয়েছিল ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বিসর্জন পর্ব শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, অনেকেই ওই সময়ের মধ্যে বিসর্জন দেয় নি।”
বস্তুত, পুলিশের নাকের ডগায় কয়েকটি মণ্ডপে তারপরেও কালীপ্রতিমা রয়ে গিয়েছিল। বুধবার যে দুটি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে, তার একটি পুলিশ সুপারের বাংলোর কাছে এসপি মোড়ের। অন্য মণ্ডপটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে কমবেশি ৫০০ মিটার দূরের আরটি গালর্স স্কুল লাগোয়া এলাকার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ভাঙুচুরের ঘটনার পরেই পুলিশ বাড়তি তৎপর হয়ে ওঠে। ওই দুই পুজো কমিটিকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্য রাতেই পুলিশকর্মীরা ‘চাপ’ দেন।
কেন পুলিশের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে ভাসান দেওয়া হয়নি? ওই দুই পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, “দীর্ঘ ৫০ বছরের প্রাচীন ওই দুই কালীপ্রতিমা বরাবর অষ্টমঙ্গলার পরে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ দিন অষ্টমঙ্গলা ছিল। বৃহস্পতিবারের পরে শুক্রবার তাঁরা প্রতিমা বিসর্জন দেবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশ বার বার এ দিনের মধ্যে ভাসান দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।” বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, পুলিশ এই উদ্যোগ কয়েকদিন আগে নিলে ওই ভাঙচুরের ঘটনা হয়ত এড়ানো যেত। পুলিশের ভূমিকায় তাঁদের ক্ষোভের আরও কারণ হল- কালী প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রায় নানা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সাউন্ড বক্স থেকে কার্যত ‘কান ফাটানো’ তীব্রতায় গান বাজানো হয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূষণ বিধি মানা তো হয়নি, ভাসানের লোকজনদের সংযত হওয়ার জন্য পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপারের দাবি, “এ রকম কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে ভবিষ্যতে যাতে শব্দ দূষণ না হয়, তা দেখা হবে।”

নিশাত পারভেজ
(পুলিশ সুপার)
“শহরের সব ক’টি কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বিসর্জন পর্ব শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, অনেকেই ওই সময়ের মধ্যে বিসর্জন দেয়নি।”


কাকলি কুণ্ডু
(হোমের সুপার)
“সময় সীমার মধ্যে বিসর্জন শেষ করার জন্য পুলিশ তৎপর হলে হোমে তাণ্ডব হয়তো হত না। শহরবাসীও স্বস্তি পেতেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”


উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়
(সিউড়ির পুরপ্রধান)
“কিছু মানুষ যদি নিজেদের বোধ হারিয়ে ফেলে, আইন না মানে, আমরা তাদের কী করে সহবত শেখাব? সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি?
মঙ্গলবার রাতে কলেজপাড়া লাগোয়া একটি ক্লাবের প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী হোমে ঢুকে তাণ্ডব চালানোয় কয়েক জন আবাসিক-সহ কর্মীরা জখম হন। এ ব্যাপারে ১১ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। হোম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছিল, এলাকার তিন জন যুবক কয়েকদিন ধরে হোমে ঢুকে নানা রকম অসামাজিক কাজ করার চেষ্টা করেছিল। বাধা দেওয়ায় তারা হুমকি দিয়েছিল। তারাই মঙ্গলবার রাতে দলবল নিয়ে হামলা চালায়। এ দিন হোমের আবাসিকদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক দেখা যায়।
হোমের সুপার কাকলি কুণ্ডুর অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা অনেকেরই থালা-বাটি, বালতি চুরি করেছে। নিরাপত্তার কারণে হোমের প্রাচীরের উপর কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া ও সব সময়ের জন্য নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব।” সেই দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কৃষ্ণা মার্ডি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.