ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। শহর জুড়ে রুপোলি পর্দার তারকাদের ঝলমলে উপস্থিতি, লাল কার্পেট, আর চলচিত্র উৎসবের জাঁকজমকে অভ্যস্ত কান এখন হাজারকয়েক পুলিশ আর নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নজরে বন্দি। বিশ্বখ্যাত রিভিয়েরা রিসর্টের লাউঞ্জ, যা হামেশাই হলিউডের তারকা আর অনুরাগীদের ভিড়ে গমগম করে, সেখানে বিরাজ করছে একেবারেই অচেনা স্তব্ধতা। কঠিন মুখে চত্বর জুড়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি সেরে নিচ্ছেন ফরাসি নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে দু’দিনের জি-২০ সম্মেলন। শহরে আসছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশপ্রধানরা। ইউরোপ জুড়ে আর্থিক অস্থিরতার জেরে বিক্ষোভকারীদের তাঁদের থেকে দূরে রাখতে তাই চেষ্টার কোনও কমতি রাখছেন না নিরাপত্তরক্ষীরা।
জি-২০ উপলক্ষে কার্লটন, মার্টিনেজ-এর মতো নামকরা হোটেলগুলিতে রাষ্ট্রপ্রধানদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে তাই তৈরি হয়েছে ত্রি-স্তর নিরাপত্তার ‘জোন-১’সেনা ও বাছাই করা কম্যান্ডোদের দিয়ে তৈরি সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টনী। শহরের সব রাস্তাতেই বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ১২ বছরের বেশিদের সচিত্র পরিচয়পত্র জামায় লাগিয়ে রাস্তায় বেরোনো। নিরাপত্তার ছবিটা আরও পরিষ্কার জলপথে শহরে ঢোকার বিখ্যাত প্রবেশপথগুলিতে। ক্রোয়াসেৎ সৈকত জুড়ে তৈরি হওয়া ‘জোন-২’-এ সেনার প্রাধান্য দেখলে ভাল বোঝা যাচ্ছে পাহারার বজ্র আঁটুনিতে মুখ লুকিয়েছে চেনা কান। আপাতত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে বোটিং। প্রায় গোটা বছরই লাগোয়া সাগরে দাঁড়িয়ে থাকা বিলাসবহুল ইয়টগুলিকে সরিয়ে বন্দর এলাকার দখল নিয়েছে সেনার রণতরী আর স্পিডবোট। পুলিশের দেওয়া নির্দিষ্ট ব্যাজ ছাড়া কাউকে সৈকত-সংলগ্ন এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট হোটেল সংলগ্ন কিছু অস্থায়ী রেস্তোরা। ক্রোয়াসেৎ-এর ধারে রেস্তোরাঁগুলির বিকিকিনির বাজারেও তাই মন্দা। স্কুল-কলেজ এবং সরকারি দফতরগুলিতে বৈঠকের আগে-পরে চার দিন ছুটি ঘোষণা করে দেওয়ায় আলগা ছুটির আমেজ থাকলেও আমজনতার চলাফেরায় একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ায় উর্দিধারীদেরই প্রাধান্য শহরের রাস্তায় রাস্তায়।
তবে এ সবের মধ্যেও থেমে নেই বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতি। গ্রিক প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, আর্থিক টানাটানির জেরে দেশে ফের ব্যায়সঙ্কোচ ব্যবস্থা চালু হতে পারে। স্বস্তিতে নেই ইতালিও। শহরের আশপাশে ইতিমধ্যেই তাঁবু ফেলে জমা হওয়া বিক্ষোভকারীদের কী ভাবে সামলান নিরাপত্তারক্ষীরা তার উপরেই এখন নির্ভর করছে কানের ‘কৌলিন্য’। |