কয়লা মাফিয়া জয়দেব মণ্ডলের আদালতে হাজিরার দিন পুলিশের সামনেই চত্বর জুড়ে কার্যত দাপিয়ে বেড়াল তাঁর দলবল। জয়দেবকে অবশ্য ৮ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
জয়দেবের বিরুদ্ধে অবৈধ কয়লা কারবারের দু’টি মামলা দায়ের করেছে জামুড়িয়া থানা। এর মধ্যে একটি মামলায় আদালতই তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছিল। বুধবার জামুড়িয়া থানার পুলিশ ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশি
|
জয়দেব মণ্ডল।
ফাইল চিত্র। |
হেফাজতে রাখার আবেদন জানায়। যে মামলায় আদালতের পরোয়ানা ছিল, সেটির ক্ষেত্রেই পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম গৈরিক রায়। ফলে, অপর মামলায় জামিন মিললেও জয়দেব ছাড়া পাননি। জলদূষণের অভিযোগে আসানসোলে তাঁর একটি কাগজকলও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে জয়দেবকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তখনই পুলিশ জানায়, তাঁর গাড়ি থেকে তিনশো রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। গাড়ির চালককেও গ্রেফতার করা হয়। কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের নির্দেশে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় জয়দেবকে। মঙ্গলবার তাঁকে ফের ওই আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই দিনই জামুড়িয়া থানার পুলিশ জয়দেবকে নিজেদের হেফাজতে আনে। ভিড় এবং ঝামেলা এড়াতে সকাল ৭টা নাগাদ জয়দেবকে আসানসোল আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। কিন্তু অনেক আগেই তার শ’তিনেক সাঙ্গোপাঙ্গ আদালত চত্বরে হাজির হয়ে যায়। জামুড়িয়া থানার গাড়ি আদালতে ঢোকা মাত্রই প্রায় কম্যান্ডো বাহিনীর মতো তারা আদালতে ঢোকার মূল দরজা ঘিরে ফেলে। মূল লক্ষ্য ছিল, সংবাদমাধ্যমকে কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া। চিত্রগ্রাহকদের হুমকিও দেওয়া হয়। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও তারা ছিল কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’। তাদের সামনেই জয়দেব-বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায়। |
আসানসোলে জয়দেব মণ্ডলের কাগজ কারখানা বন্ধ করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। নিজস্ব চিত্র |
দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাসে ওঠার আগে পর্যন্ত পুলিশ লকআপে বসেই সারাক্ষণ সাঙ্গোপাঙ্গদের সঙ্গে কথা বলে যান সাদা তোয়ালেতে মুখ ঢাকা জয়দেব। এমনকী লকআপে দাঁড়িয়েই দাবি করেন, চক্রান্ত করেই তাঁকে অস্ত্র আইনে ধরা হয়েছে। পুলিশকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, বিষয়টি তাঁদের নজরেই আসেনি। সন্ধ্যায় আসানসোলের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) শীষরাম ঝাঝরিয়া বলেন, “ওখানে মাফিয়ার লোকজন জড়ো হয়েছিল বলে খবর পাইনি। তাদের মধ্যে দাগি বা ফেরার কেউ ছিল কি না, তা-ও জানা নেই। কারা আদালতে এসে জড়ো হয়েছিল, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।”
ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগেই আসানসোলে জয়দেবের সদ্যনির্মিত কাগজকলও সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কারখানার আশপাশের বাসিন্দারা পর্ষদে অভিযোগ করেছিলেন, পাশের ক্যানাল দিয়ে রাসায়নিক বয়ে যাচ্ছে। ওই জল ব্যবহার করে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পর্ষদের আসানসোল দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অঞ্জন ফৌজদার বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞেরা ওই এলাকায় গিয়ে জল পরীক্ষা করে দূষণের হদিস পেয়েছেন। তার পরেই আমরা উৎপাদন বন্ধের নোটিস জারি করেছি।” জয়দেব মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, ‘চক্রান্ত’ করেই উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। অঞ্জনবাবু জানান, মালিকপক্ষকে শুনানিতে ডাকা হবে। তবে তার আগে পর্ষদের অনুমতি ছাড়া কারখানা চালানো যাবে না। |