|
|
|
|
ছিনতাইকারী বলে মারধর, নিহত দুই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
ছিনতাইবাজ সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে মারায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ইংরেজবাজারের মিল্কি এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতে যারা ওই দুই যুবককে পিটিয়ে মেরেছে তাদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মিল্কির বাসিন্দারা। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। অবরোধ বিক্ষোভে মালদহ- মানিকচক রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়। গ্রামে ফেরার পথে গত একমাসে গ্রামের ৫ জনকে কুপিয়ে মোবাইল, টাকা ছিনতাই করেছে দুষ্কৃতীরা। যার মধ্যে এখনও এক জন কলকাতায় চিকিৎসাধীন। থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ একজন দুষ্কৃতীকে ধরেনি বলে অভিযোগ। পুলিশি নিস্ক্রিয়তায় ক্ষোভে ফুঁসছিলেন ইংরেজবাজার থানার বিনোদপুর, কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা। পুলিশের উপর ভরসা রাখতে না পেরে দুই গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামরক্ষা কমিটি গড়ে রাত পাহারাও দিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ গ্রামে পাহারা দিতে গিয়ে মোটর সাইকেলে অপরিচিত তিন যুবককে দেখতে পান গ্রামরক্ষা কমিটির ছেলেরা। তাদের ছিনতাইবাজ সন্দেহ করে গ্রাম রক্ষা কমিটির যুবকরা চিৎকার শুরু করেন। এর পর গ্রামবাসীরা ছুটে গিয়ে দুজনকে পিটিয়ে মারেন বলে অভিযোগ। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “মোটর সাইকেল ছিনতাইবাজ সন্দেহে গ্রামবাসীরা শুক্রবার রাতে দুজনকে পিটিয়ে মেরেছে। যাদের পিটিয়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।” এ দিকে ২ নিরপরাধ শ্রমিক সরবরাহকারীকে পিটিয়ে মারার ক্ষোভে এ দিন সকাল ৯টা থেকে মিল্কির কয়েক হাজার মানুষ মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গণপিটুনিতে নিহত শেখ ইউসুফ ও শেখ মনিরুলের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও বিনোদপুরের বাসিন্দারা ওদের ছিনতাইবাজ সাজিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। শেখ রুনুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিল্কি পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান তারেক আলি বলেন, “যাদের মারা হয়েছে, তারা নিরপরাধ। যারা মেরেছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস সদস্য সেফ নিজাম আলি বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দুজনকে খুন করা হয়েছে। একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিন জন শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন। শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার জন্য তাঁরা সাইকেলে চড়ে বিনোদপুরের দিকে গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আড়াই লক্ষ টাকা ছিল। বিনোদপুরের বাসিন্দারা আড়াই লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। বিনোদপুর, কৃষ্ণপর গ্রামের অনেকের অভিযোগ, শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। যেখানে নিয়মিত ছিনতাই হচ্ছে সেই আম বাগানের ঘন জঙ্গলের ধারে রাত ৯টায় তিন জন কি উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন? গ্রামবাসীদের কয়েক জন জানান, অষ্টমীর রাতে জনার্দন মন্ডল, অসীম মন্ডল, চিন্টু সাহাকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। কয়েক দিন আগে গ্রামের জামাই সুভাষ মন্ডল শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ছিনতাইবাজরা তাঁকে কুপিয়ে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। সুদাম মন্ডল বলেন, “ছিনতাইবাজরা মেরে আমার দাঁত ভেঙে দিয়ে টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। একের পর ঘটনা পুলিশকে জানানোর পরে এক জনও ধরা পড়েনি। ইংরেজবাজারের কংগ্রেস বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি বলেন, “লাগাতার ছিনতাই ও চুরিতে এলাকার বাসিন্দার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশকে অভিযোগ জানানোর পরে ছিনতাইবাজরা ধরা না-পড়ায় বাসিন্দারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। পুলিশ যদি ছিনতাইবাজদের নালিশ পেয়েই ধরত, তা হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না।” |
|
|
|
|
|