|
|
|
|
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় |
দেড় বছরেও পেশ হয়নি দুর্নীতি মামলার চার্জশিট |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
নানা তরফে বহু আবেদন-নিবেদন হয়েছে। সরকারি তরফে আদেশ-নির্দেশ জারিও কম হয়নি। খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি একাধিকবার অফিসারদের বার্তা পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেড় বছর কেটে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল না হওয়ায় উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী তো বটেই, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির মামলায় যাঁদের নাম জড়িয়েছে এবং তাঁদের পাশে কে বা কারা দাঁড়িয়েছেন, সেই ব্যাপারে বিশদে তথ্য পৌঁছেছে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। সম্প্রতি সাংগঠনিক কাজে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কে বা কারা রাতারাতি বাম সংগঠন পাল্টে তৃণমূলে সামিল হয়েছেন, সেই ব্যাপারেও খুঁটিয়ে খবর নিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়। একদা ডাকসাইটে বাম নেতা হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজন রাতারাতি সংগঠন গড়ে তৃণমূলের ছাতার তলায় আসার চেষ্টা করছেন শুনে স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন মুকুলবাবু। |
|
সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিষয়টি নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া মেনে যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দেওয়ার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।
এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা যা বলেছেন, তার মর্মার্থ, উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার কথাবার্তা হয়েছে। ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে অন্য কিছু মামলায় চার্জশিট দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকারি অর্থ নয়ছয়ের মামলায় চার্জশিট দিতে নিয়োগকর্তার অনুমোদন প্রয়োজন। ওই অনুমোদন দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি অথবা আচার্য তথা রাজ্যপাল। সেই অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনে যিনি মামলা দায়ের করেছেন, সেই উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদার কিন্তু পুলিশ কর্তাদের চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, উচ্চ আদালতের সরকারি আইনজীবী লিখিত মতামতে জানিয়েছেন, যে সব অভিযোগে মামলা চলছে, তার মধ্যে কয়েকটি ধারায় নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চার্জশিট দেওয়া যায়। নিয়োগকর্তার অনুমতি মিললে দ্বিতীয় দফায় সহায়ক চার্জশিট পেশের সংস্থান আইনে রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্তারা দু-দফায় কেন চার্জশিট দিতে চাইছে না, সেই প্রশ্নেই চলছে
নানা জল্পনা।
বস্তুত, ২০১০ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা হিসেবে গরমিলের অভিযোগে উপাচার্য থানায় অভিযোগ করার পর থেকেই জল্পনার সূত্রপাত। দিলীপবাবু আগাম জামিন নিলেও এখনও কাজে যোগ দিতে পারেননি। দিলীপবাবু গোড়া থেকে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু মামলার তদন্ত সম্পূর্ণ
করে তদন্তকারী অফিসার সীতারাম সিংহ তাঁর রিপোর্টে দিলীপবাবু, প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা-সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তা নিয়ে চার্জশিট দেওয়ার জন্য ডিজি কয়েক দফায় নির্দেশ দিলেও টালবাহানা চলছে কেন, সেই প্রশ্নেই
এখন বিশ্ববিদ্যালয় মহলে চলছে নানা আলোচনা।
এই ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেছেন, “শুধু কলকাতা কিংবা প্রেসিডেন্সি নয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কেও রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। দুর্নীতির মামলায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কেউ আড়াল করার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না।” |
|
|
|
|
|