|
হরমোন লেভেল: এলেবেলে চলবে না |
প্রথম কৈশোরের ব্রণ, নতুন মায়ের চুল ওঠা, মেয়েদের দাড়ি গোঁফ আসলে দোষ হরমোনের।
তাকে ভিটামিন খাইয়ে, মলম লাগিয়ে শুধরে নিন, সব সমস্যা বিদায় হবে। ডা. সুব্রত মালাকার |
ত্বকের সমস্যা নিয়ে আমরা সবাই সব সময় বেশ চিন্তিত থাকি। বেশি চিন্তা সমস্যাকে অনেক ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এখন যে পরিমাণ সচেতনতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কোনও ছোট উপসর্গকে আমরা বাদ দিই না। অবশ্যই এর একটা ভাল দিক আছে। ত্বকের এমন অনেক ধরনের সমস্যা আছে যেগুলিকে আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ মনে হলেও, আসলে তা হয় না। সম্পূর্ণ সমস্যাটির উৎপত্তিস্থল হয়তো প্রকৃতপক্ষে হরমোন। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে হরমোন নিঃসরণের গতিবিধি বিভিন্ন আকার নেয়। কিডনির ওপর যে ত্রিকোণাকৃতি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থাকে, সেখান থেকে পরিণত বয়সে যৌন-হরমোন বেরোয়। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই এ রকমই নিয়ম। ছেলেদের অ্যান্ড্রোজেন এবং মেয়েদের ইস্ট্রোজেন।
|
যৌন-হরমোন এবং ব্রণ |
বয়ঃসন্ধিতে বেশি অ্যান্ড্রোজেনের নিঃসরণ ঘটছে, সিবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করছে, সিবাম নির্গত হচ্ছে, এবং এই সিবাম ব্রণ হওয়ার যে জীবাণু, (B. Acne) তার খাদ্য। মেয়েদের মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন কমে আসে, ফলে অনেকের ক্ষেত্রে ব্রণ দেখা যায়।
|
চিকিৎসা |
খাওয়ার ও লাগানোরওষুধ দু’রকমেরই আছে। যাঁদের ব্রণ বেশি হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ জাতীয় ওষুধ খুবই কাজ দেয়। কারণ এতে সিবামের নিঃসরণ কম হয় এবং ব্রণও তাড়াতাড়ি কমে যায়। এ ছাড়া যাঁরা গর্ভনিরোধক ওষুধ খান তাঁদেরও কম হয় ব্রণ। কারণ এগুলোতে ইস্ট্রোজেন থাকে।
|
হরমোন এবং হেয়ার গ্রোথ |
আমাদের মাথার চুল চির দিন থাকে না, উঠে যায় এবং নতুন চুল জন্মায়। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি পায় এবং তার সঙ্গে চুলের পরিমাণও একই হারে বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেন কমতে থাকে এবং চুলও উঠে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা মেয়েদের দাড়ি গোঁফ দেখে বিস্মিত হই, কিন্তু এগুলোর পেছনে হরমোনের হাত আছে। প্রতি দশ থেকে পনেরো জনের মধ্যে এক জন মেয়ের এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি বংশানুক্রমিকও হতে পারে। যাঁদের রক্তে পুরুষ হরমোন বা অ্যান্ড্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেই সব মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি থাকলেও দাড়ি গোঁফ গজাতে পারে।
|
চিকিৎসা |
কিছু খাবার ওষুধ আছে যা অবাঞ্ছিত লোম জন্মানোর হারকে (হেয়ার গ্রোথ) কম করে। কিন্তু এক মাত্র স্থায়ী সমাধান লেসার ট্রিটমেন্ট।
|
মেচেতা |
গর্ভবতী মহিলাদের মেচেতা বেশি পরিমাণে দেখা যায়। ত্বকের যে স্বাভাবিক রংটি থাকে, সেটি তৈরি করে মেলানিন। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেলানিন বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে মেচেতা দেখা যায়।
|
চিকিৎসা |
• ঠিক ভাবে চিকিৎসা না হলে মেচেতার দাগ সারা বছর থেকে যায়।
• এ ক্ষেত্রেমেক-আপ বা কনসিলার ব্যবহার করে মেচেতার দাগ ঢাকা যায়।
• সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করবেন। তার মাত্রা এসপিএফ-৩০’এর বেশি হওয়া উচিত।
• হাইড্রোকুইনিন জাতীয় ক্রিম লাগালে উপকার পাবেন। খাওয়ার মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওষুধ।
|
বয়সের ছাপ |
আমরা ধরেই নিই মেনোপজের পর মেয়েদের বয়সের ছাপ দেখা যায়। কথাটি কিছুটা ঠিক। আসলে তখন ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে:
ক) ত্বক খুব পাতলা হয়ে যায়,
খ) সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করার নিজস্ব যে ক্ষমতা ত্বকের থাকে সেটি কমে যায়
গ) ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে।
|
চিকিৎসা |
• ময়শ্চারাইজার ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
• গ্লাইকোনিক অ্যাসিড জাতীয় ক্রিম লাগাতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
•
এ ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্রিমও খুব কার্যকারী।
• খাওয়ার জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওষুধই শ্রেয়।
|
অত্যধিক চুল পড়া |
অনেক সময় দেখা যায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাথাতেও বেশ টাক। এই টাক সরু বা গোলাকৃতি দু’রকমই হতে পারে। এর প্রধান কারণ বংশানুক্রমিক হলেও আমরা বিনা চিকিৎসায় একে ছেড়ে দিতে পারি না।
|
চিকিৎসা |
• মেনক্সিডিন লোশন
খাওয়ার কিছু ওষুধ আছে, যা পুরুষ হরমোন নিঃসরণ রোধে কাজ করে।
• সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং কার্যকারী চিকিৎসা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। |
যোগাযোগ: ২৩৫৮ ৮০১০,
৯৪৩৩০ ২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |