গপাগপ নয়, খান রয়েসয়ে
দুই বান্ধবী ঢুকেছেন রেস্তোরাঁয়। দু’টো বার্গারের অর্ডার দিলেন। টেবিলে প্লেট আসা মাত্র এক জনের খাওয়া নিমেষে শেষ। অন্য জন আয়েশ করে ছোট ছোট কামড়ে শুরু করলেন খাওয়া। খেয়াল করলেই বুঝবেন, দু’জনের চেহারায় পার্থক্য আছে। যদি তা না-ও থাকে, ভবিষ্যতে তফাৎ তৈরি হবেই। উঁহু! সব সময় বার্গারকে দোষ দিলে চলবে না। খলনায়ক এখানে খাওয়ার গতি। অর্থাৎ, এক জন মহিলা কত দ্রুত তাঁর খাওয়া শেষ করেন, তার ওপর নির্ভর করবে তাঁর ওজন এমনটাই জানাচ্ছেন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
দেড় হাজারেরও বেশি কিউয়ি (নিউজিল্যান্ড-এর অধিবাসী) মহিলা, যাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, তাঁদের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছিল। এঁদের খাওয়ার গতি আর বডি-মাস ইনডেক্স-কে (বি এম আই) বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন যে, কোনও মধ্যবয়সি মহিলা যদি সময় নিয়ে খান, তা হলে তাঁর শরীরে মেদ জমার আশঙ্কা কম থাকে। যাঁরা দ্রুত খান, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক এর উল্টো হবে। মুখ্য গবেষক ডা. ক্যারোলিন হরওয়াথ জানাচ্ছেন যে, কোনও মহিলার বয়স, তিনি ধূমপান করেন কিনা এবং তাঁর মেনোপজাল স্ট্যাটাস কী এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে দেখা গেছে, যে সমস্ত মহিলারা দ্রুত খান, তাঁদের বি এম আই তত বেশি, অর্থাৎ তাঁরা তত বেশি মোটা। এখন প্রশ্ন হল, বি এম আই আসলে কী? কোনও মানুষের দৈহিক ওজন (কেজি) আর তাঁর দৈর্ঘ্যের (মিটার) বর্গের অনুপাতকেই সাধারণ ভাবে বডি-মাস ইনডেক্স বলা হয়। অর্থাৎ, বি এম আই = ওজন (কেজি)/{উচ্চতা (মিটার)}২ । কেউ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন কিনা, বা প্রয়োজনের তুলনায় ওজন কারও কম কিনা এই বি এম আই-এর সাহায্যে বিশেষজ্ঞরা বলে দিতে পারেন।
খাওয়ার গতি বাড়লে কতটা ওজন বাড়তে পারে? ধরা যাক, একটা স্কেল নেওয়া হল। এই স্কেলের এক দিকে থাকবেন যাঁরা খুব আস্তে খান, আর অন্য দিকে থাকবে যাঁরা প্রচণ্ড দ্রুত খান। এ বার স্কেলের মাঝের অংশটিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হল। ডা. ক্যারোলিন হরওয়াথ জানাচ্ছেন যে, খাওয়ার গতি যদি এক ধাপ বাড়ে, তা হলে সাধারণ বডি-মাস ইনডেক্স রয়েছে, এমন এক জন মহিলার বি এম আই বাড়বে ২.৮ শতাংশ, যেটা প্রায় ১.৯৫ কেজি ওজন বৃদ্ধির সমান।
হরওয়াথ আর তাঁর টিম তাই যে সমস্ত মহিলারা দ্রুত খান, তাঁদের দু’বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন এটা দেখার জন্য যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ওজন আরও বাড়ছে কিনা। এই পরীক্ষায় যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে, তাকে খতিয়ে দেখে খাওয়ার গতি আর ওজন এই দুইয়ের মধ্যে একটা কার্য-কারণ সম্পর্ক যদি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা হলে অবশ্যই মহিলাদের ধীরে ধীরে খেতে উৎসাহিত করা যাবে। ভবিষ্যতে মহিলাদের ওবেসিটির সমস্যা এতে অনেকটাই কমতে পারে।
এই পরীক্ষা আরও একটা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন যে সমস্ত মহিলারা, তাঁদের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ডায়েট-বহির্ভূত পন্থা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্যালরি কমানোর জন্য বেশ কিছু দিন আগেও নানা ধরনের খাবারদাবারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হত। কিন্তু দেখা গেছে এর দীর্ঘমেয়াদি ফল তেমন ভাল হয়নি। যাঁরা কঠোর ভাবে ডায়েট চার্ট মেনে চলতেন, তাঁদের অনেকেই বছর পাঁচেকের মধ্যে ফের আগের অবস্থায় ফিরে গেছেন। কারও কারও ওজন বেড়েছে আবার আগের চেয়েও বেশি। খাওয়ার গতি আর ওজনের মধ্যের সম্পর্কটি সত্যি বলে প্রমাণিত হলে, যাঁরা ইতিমধ্যেই বিপদসীমার কাছাকাছি আছেন, তাঁদের আরও ওজন বাড়ার প্রবণতা কমানো যাবে। এমনকী, কারও কারও ওজন কমানোও সম্ভব হবে। ভাবুন তো, কী সহজ সমাধান! যাঁরা ইতিমধ্যেই ওয়েট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের আর ওজন কমছে না কেন ভেবে মাথার চুল টানাটানি করতে হবে না। দিব্যি সময় নিয়ে খেয়েদেয়ে বডি-মাস ইনডেক্স কমিয়ে ফেলতে পারবেন। জিমের পিছনে কাঁড়ি কাঁড়ি পয়সা ঢালতে হবে না, চোখের সামনে চমৎকার খাবার সাজানো দেখেও পেটে কিল মেরে বসে থাকতে হবে না। না খেয়ে নয়, স্রেফ আস্তে খেয়েই ঝরঝরে হয়ে যাবে শরীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.