কোথাও ছাদ থেকে জল পড়ছে। কোথাও বা দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। কোথাও বাড়ির ভিতরে গজিয়ে উঠেছে আগাছা। কোথাও বাইরে ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। কোথাও বেহাল শৌচাগার তো কোথাও জলের পাইপ লাইনে ফুটো। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কর্মরত চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের আবাসনগুলি জীর্ণপ্রায়। অভিযোগ, বেতন থেকে আবাসনের ভাড়াবাবদ টাকা নিয়মমতো কেটে নিলেও ভগ্নপ্রায় এই সরকারি আবাসনগুলি সংস্কারে উদাসীন প্রশাসন।
বিষয়টি মেনে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “জেলার ব্লক, গ্রামীণ-সহ অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-কর্মীদের আবাসনগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। আবাসন ছেড়ে অন্যত্র বাড়ি ভাড়া করে থাকার জন্য আমাকে প্রতি দিনই জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কর্মীরা লিখিত আবেদন করছেন। আবাসনগুলি দ্রুত সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে আমি লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২৯টি গ্রামীণ ও ব্লক হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ৮২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিনটি মহকুমা হাসপাতাল ও একটি মেডিক্যাল কলেজ। মান অনুযায়ী কোথাও ২০-৩০, কোথাও ৫০-৬০টি করে আবাসন রয়েছে। নিয়মানুযায়ী, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত সমস্ত মেডিক্যাল অফিসার, নার্স-সহ অন্য কর্মীদের সংশ্লিষ্ট সরকারি আবাসনেই থাকতে হয়। যদিও কর্মী অনুযায়ী পর্যাপ্ত বাড়ি না থাকায় অনেকেই বাইরে ভাড়ায় থাকেন। |
যদিও স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার সত্তর ভাগ চিকিৎসক-কর্মী সরকারি আবাসনেই থাকেন। এ দিকে, অধিকাংশ আবাসনই কমপক্ষে ৫০-৬০ বছরের পুরনো। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। কিন্তু আবাসনগুলির কোনও সংস্কার হচ্ছে না। চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ দুই কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাট। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এক কক্ষবিশিষ্ট। এত ছোট, ভগ্নপ্রায় বাড়িতে কষ্টেসৃষ্টে থাকতে হয় কর্মীদের পরিবারকে।
হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার পম্পা রায় বলেন, “আবাসনগুলি ভগ্নপ্রায়। তারই মধ্যে কোনও রকমে থাকছি। যে কোনও সময়ে ছাদ, দেওয়াল ভেঙে পড়তে পারে।” ওই হাসপাতালেরই কর্মী গঙ্গাধর মাধাই বলেন, “দু’তিন বছর ছাড়াই ভাড়া বাড়ছে আবাসনের। কিন্তু সংস্কার করার দিকে নজর নেই কারও। যত দিন যাচ্ছে বাড়িতে ফাটল বাড়ছে। বার বার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি।” চন্দ্রকোনা রোড ব্লক হাসপাতালের আবাসনগুলিরও অবস্থা বেশ খারাপ। ফার্মাসিস্ট কালোবরণ রায় এবং নার্স বন্দনা ঘোষ বলেন, “মাঝেমধ্যেই ছাদ থেকে চাঙর খসে পড়ছে। ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় সব সময়।”
একই বক্তব্য গোয়ালতোড়ের কেওয়াকোন ব্লক হাসপাতালের নার্স শুভ্রা শীটেরও। কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালের নার্স সুপর্ণা সাউ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সন্ধ্যা সিংহ-দের বক্তব্য, “বাড়ির ভিতরে জঙ্গলে ভর্তি। ছাদ ফুটো হয়ে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টি পড়লেই জল পড়ে। ত্রিপল চাপা দিয়ে কাজ চালাতে হয়।” কেশপুরের বিএমওএইচ জয়দেব মণ্ডল, সবং হাসপাতালের বিএমওএইচ প্রকৃতিরঞ্জন শাসমল বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই আবাসনগুলি বেহাল। সারানোর দাবিতে কর্মী-সহ চিকিৎসকেরা আমাদের মাঝেমধ্যে ঘেরাও করে রাখেন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরাও তো একই অবস্থার মধ্যে আছি। জানি না আর কত দিন এই ভাবে থাকতে হবে!” |