‘ব্যস্ত’ ছিলেন চেম্বারে
‘কল’ পেয়েও হাসপাতালে
এলেন না চিকিৎসক
চিকিৎসায় ‘দায়সারা’ মনোভাব আর না হয় ‘দায় এড়ানো’, কৃষ্ণনগর সদর হাসপতালের এ হেন আচরণ নতুন নয়।
চিকিৎসা বিভ্রাটের সঙ্গে এক বন্ধনীতে ঢুকে পনা ওই হাসপাতালে কখনও ‘প্রসূতি’র পেটে ‘গ্যাস’ বলে দায় এড়িয়ে যান চিকিৎসক, কখনও বা প্রসবের সময়ে চিকিৎসকের কাঁচি ছিন্ন করে দেয় সদ্যোজাতের মাথা। মনোরোগীদের জন্য শয্যা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের শৌচাগারে ঠাঁই হয় যে হাসপাতালে সেই কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালে এ বার প্রসূতির অবস্থা সঙ্কটজনক জেনেও সেখানে আসার প্রয়োজনই মনে করলেন না কর্তব্যরত চিকিৎসক।
শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত কোনও চিকিৎসকেরই দেখা না মেলায় কার্যত পরিষেবাহীন ওই প্রসূতি বিভাগ এ দিন সকালে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় অন্তত ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে’র চেনা মন্তব্যের বাইরে গিয়ে হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী প্রসূতি বিভাগে সব সময়ে এক জন চিকিৎসককে প্রস্তুত থাকতে হয়, যাতে তাঁকে ডাকলেই পাওয়া যায়। কিন্তু এ দিন যিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন, ডাক পাঠানো সত্ত্বেও তিনি ওয়ার্ডে আসেননি।”
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম অমিতাভ চৌধুরী। জেলা সদরে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে অধিকাংশ সময়েই ‘ব্যস্ত’ থাকতে হয় তাঁকে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নির্বিকার গলায় তিনি বলেন, “ব্যস্ত তো ছিলামই। আমার চেম্বারে কয়েক জন রোগী এসেছিল তাঁদের না দেখে হাসপাতালে যাব কী করে!” কিন্তু ওই সময়ে তো আপনার হাসাপাতালে থাকার কথা? অমিতাভবাবুর জবাব, “আমি অসুস্থ ছিলাম। বৃহস্পতিবারেই আমি ছুটির জন্য আবেদন করেছিলাম। সুপার কিছু না বলায় ধরে নিয়েছিলাম ছুটির অনুমোদন মিলেছে।”
সুপার অবশ্য স্পষ্টই জানাচ্ছেন অমিতাভবাবুকে কোনও ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। কাজলবাবু বলেন, “ওঁর ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। আজ সকাল ৭টা থেকে প্রসূতি তাঁরই দায়িত্বে থাকার কথা। ওই সময়ে এক প্রসূতির অবস্থা খারাপ থাকায় সাড়ে আটটা থেকে বার বার তাঁকে ডেকে পাঠানো হলেও তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আসেননি। তিনি ‘অন কল’ দায়িত্ব নিতেও অস্বীকার করেন। বেলা এগারোটা নাগাদ অন্য এক চিকিৎসককে অনুরোধ করে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করানো হয়।”
সুপারের অভিযোগ, “হাসপাতালের যে কর্মীরা অমিতাভ চৌধুরীকে ডিউটিতে সই করাতে গিয়েছিল তাদের কাছে আমি জানতে পেরেছি যে ওই চিকিৎসক তখন বক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক জন চিকিৎসক হাসপাতলের ডিউটির বেলায় অসুস্থ এবং চেম্বারে রোগী দেখার সময়ে সুস্থ তা তো হতে পারে না।”
তবে সুপারের মন্তব্য শুনে এ দিন দুপুর ২-টো নাগাদ অমিতাভবাবু হাসপাতালে এসে সুপারের হাতে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে যান। যাওয়ার আগে অমিতাভবাবুর বক্তব্য, “আমার শরীর ভাল নেই। তারউপরে নানা ভাবে অপমানিত হয়েছি। আমার পক্ষে আর সরকারি চাকরি করা সম্ভব নয়।”
তবে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “চিকিৎসকের এরকম দায় এড়ানো আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। সুপারকে বলেছি ওই চিকিৎসককে শো-কজ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।” পাশাপাশি, অমিতাভবাবুর ইস্তফা দেওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পদ্ধতি এটা নয়। মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক বলেন, “ইস্তফা দিলেই তা গ্রহণ করা যায় না। তার কিছু নিয়ম কানুন আছে। খেয়াল খুশি মতো চললেই তো হল না!”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হাসপতালের প্রসূতি বিভাগের দু’জন চিকিৎসক স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছেন। আরও দু’জন অবসরের জন্য আবেদন করেছেন। এক জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ইস্তফা দিয়েছেন আরও এক চিকিৎসক। ফলে মাত্র ৩৮ জন চিকিৎসককে সম্বল করেই চলছে জেলা হাসপাতালের দু’টি ক্যাম্পাস। প্রসূতি বিভাগে রয়েছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। যেখানে এই বিভাগে রোগীর সংখ্যা গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশো। এই অবস্থায় অমিতাভবাবু ইস্তফা দেওয়ায় প্রসূতি বিভাগে নতুন করে সমস্যা দেখা দেবে তা বলা বাহুল্য।
এ দিনের ঘটনার পরে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য কৃষাণু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে ডিউটি না করে ওই চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। আমি নিজে তা দেখে এসেছি। আমরা চাই এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ নিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”
কিন্তু চিকিৎসকদের মনোভাব কি তাতে বদলাবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.