চিকিৎসা গাফিলতিতে অনুরাধা সাহার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত কলকাতার চার চিকিৎসক ও এক বেসরকারি হাসপাতালকে ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন। পাশাপাশি চিকিৎসা গাফিলতিতে পরোক্ষ ভূমিকা থাকায় মৃতার স্বামী প্রবাসী চিকিৎসক কুনাল সাহার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে কমিশন ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
চিকিৎসা গাফিলতির ঘটনায় এত বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির ভারতে এর আগে নেই বলে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন সূত্রের খবর। এর আগে ২০০৯ সালে প্রশান্ত এস ধানাঙ্কা নামে ইনফোসিসের এক ইঞ্জিনিয়ারের দায়ের করা চিকিৎসা গাফিলতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই বছরই ধানাঙ্কার মৃত্যু হয়। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন শুক্রবার তাদের রায়ে জানিয়েছে, চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে ৪০ লক্ষ ৪০ হাজার, চিকিৎসক বৈদ্যনাথ হালদারকে ২৬ লক্ষ ৯৩ হাজার, চিকিৎসক বলরাম প্রসাদকে ২৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ও বেসরকারি হাসপাতাল আমরিকে ৪০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রায় ঘোষণার আট সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের ক্ষতিপুরণের টাকা মেটাতে বলা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না মেটালে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে অভিযুক্তদের। মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত চিকিৎসক অবনী রায়চৌধুরী মারা যাওয়ায় তাঁর ভাগের ২৫ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা অবশ্য পাবেন না আবেদনকারী। শুধু ওই চার চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতালকেই অভিযুক্ত করেনি জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন, তারা বলেছে, অনুরাধার চিকিৎসা গাফিলতিতে তাঁর স্বামী চিকিৎসক কুণাল সাহারও ভূমিকা রয়েছে। তাই তাঁর প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৮ সালে গরমের ছুটিতে কলকাতায় বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আমেরিকা প্রবাসী শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনুরাধা সাহা। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর ওই বছরই ২৮ মে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই চার চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, বৈদ্যনাথ হালদার, অবনী রায়চৌধুরী, বলরাম প্রসাদ এবং বেসরকারি হাসপাতাল আমরির বিরুদ্ধে চিকিৎসা গাফিলতির মামলা করেছিলেন অনুরাধার স্বামী প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা।
জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন এর আগে ক্ষতিপূরণ চেয়ে কুনালবাবুর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কুনালবাবু সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংস্থাকে অনুরাধাদেবীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করে বিষয়টি ফের জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কমিশনকে ক্ষতিপূরণের পরিমান স্থির করার নির্দেশ দিয়েছিল তারা। বিচারপতি আর সি জৈন এবং বিচারপতি এস কে নায়েককে কে নিয়ে গঠিত কমিশনের বেঞ্চ এ দিন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কুনালবাবু বলেন, “দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আইনি যুদ্ধের শেষে অন্তত একটা বিচার পেলাম। ওই কমিশনই প্রথম দিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও গাফিলতি পাননি বলে জানিয়েছিল। এদিনের এই রায়ে ভুল চিকিৎসায় কোনও মৃতের পরিবারকে একটু আশার আলো দেখাবে।” অন্য দিকে চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে রায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “হাতে কাগজ কিছু পাইনি। তবে রায়ের ব্যাপারে শুনেছি। এ বার কী করব সে ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করব।” চিকিৎসক বৈদ্যনাথ হালদার বলেন, “এত দিন তো আইন অনুসরণ করেই চললাম। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করব।” আমরি হাসপাতালের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডিএন অগ্রবালের এ ব্যাপারে বক্তব্য, “এই ঘটনায় আমাদের ভূমিকা খুব একটা ছিল না। কমিশন কোন ভিত্তিতে আমাদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে সেই কাগজপত্র খতিয়ে দেখলে তবেই কিছু বলতে পারব।” |