এখনও রাজ্যের সিংহভাগ মানুষের মন ‘বাম-বিরোধী’। তাই এমন আন্দোলন করা উচিত নয়, যাতে মানুষ বিরক্ত হন। শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকে এমনই পরামর্শ দিলেন শরিক দলের নেতারা। তাঁদের মতে, মূলত জমায়েত ও প্রচার আন্দোলনের উপরেই এখন বামেদের নির্ভর করা উচিত।
মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, শিক্ষাক্ষেত্রে গণতন্ত্র-হরণ এবং ‘জ্যোতি বসু নগর’ নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ফ্রন্ট আন্দোলনে নামছে। আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে বামফ্রন্টের বৈঠক বসেছিল। সেখানেই আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, প্রতি দিন মানুষ মূল্যবৃদ্ধির আঁচ টের পাচ্ছেন। তাঁরা বিরক্ত। এর বিরুদ্ধে প্রচার করতে হবে। কিন্তু এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে মানুষ বামেদের উপরেও বিরক্ত হন। মনোজবাবুকে সমর্থন করেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। তিনি বলেন, যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে প্রচার করা যাবে, ততই ভাল।
বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কিছু কিছু ‘কাজ’ নিয়ে মানুষ ‘বিরক্ত’ এবং সেই পরিস্থিতি তাঁদের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ বলে সম্প্রতি বিমানবাবুকে একটি মহল থেকে জানানো হয়েছিল। বিমানবাবু কিন্তু সেই বক্তব্য কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সুচিন্তিত অভিমত ছিল, এখন আপাতত দু’বছর রাজ্যের মানুষের অধিকাংশই তাঁদের কথা শুনতে রাজি থাকবেন না। যে কারণে তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়বেন। এদিন ফ্রন্টের বৈঠকে শরিক নেতারাও একই অভিমত পোষণ করলেন। বৈঠকের পর বিমানবাবু বলেন, “বিধানচন্দ্র রায় যেমন সল্টলেকের সূচনা করেছিলেন, তেমনই জ্যোতি বসু নিউটাউনের সূচনা করেছিলেন। বামফ্রন্টের আমলেই সল্টলেকের নাম বিধাননগর দেওয়া হয়। আর ২৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুর নামে নিউটাউনের নামকরণ হয়। আমরা এর পরিবর্তন মেনে নেব না।” ওই নামকরণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও তৎকালীন কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা তথা বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন বলেও বিমানবাবু জানান।
আন্দোলনে নেমে ১ থেকে ৬ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রচার চালাবে বামেরা। ৮ তারিখ দিল্লিতে ‘জেল ভরো’। এর পর রাজ্য জুড়ে প্রচার ছাড়াও ২১-২৫ নভেম্বর জেলা সদর ও মহকুমা সদরগুলিতে আইন অমান্য করা হবে। এ ক্ষেত্রেও জমায়েত ও প্রচারের উপরেই বামেরা নির্ভরশীল। তবে জমায়েতের জন্য বড় শরিক সিপিএমের উপরেই বেশি নির্ভরশীল শরিকরা। ২৯ নভেম্বর কলকাতায় আইনঅমান্য করবে রাজ্য বামফ্রন্ট। মূল্যবৃদ্ধি রোধ, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও শক্তিশালী লোকপাল বিল পেশের দাবিতে এ দিন দেশ জুড়ে সিপিআই অবস্থান-বিক্ষোভ করে। ধর্মতলার অবস্থানে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দগোপাল ভট্টাচার্য। মঞ্জুবাবু জানান, প্রতি জেলা ও মহকুমা সদরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভে অন্য বাম দলের নেতারাও ছিলেন। |