আজ শেষ ‘সময়সীমা’, পরীক্ষায় প্রশাসন
রীক্ষায় প্রশাসন। পরীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী।
পরীক্ষা জনজীবন স্বাভাবিক রাখার। পরীক্ষা হিংসা-নাশকতা ঠেকানোর।
অস্ত্র সংবরণের জন্য মাওবাদীদের যে সাত দিনের ‘সময়সীমা’ বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজ, শনিবার তা শেষ হচ্ছে। আজই জঙ্গলমহলে ফের বন্ধ ডেকে সংঘাতের বার্তা দিয়েছে মাওবাদীরা। কোনও রকম অশান্তি হতে না দেওয়ার ‘চ্যালেঞ্জ’ তাই রাজ্য প্রশাসনের সামনে। মাওবাদীদের বন্ধ-হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে ফের পথে নেমেই প্রতিবাদ জানায় কি না জঙ্গমহলের আম-জনতা, দেখার তা-ও।
মাওবাদী বন্ধকে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়েই আজ গোয়ালতোড়ের পিংবনিতে সভা ডেকেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, “বন্ধকে উপেক্ষা করে জঙ্গলমহলের মানুষ আমাদের জমায়েতে যোগ দেবেন।” শুভেন্দুই ওই সভার মুখ্য বক্তা। যিনি বলছেন, ““গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জঙ্গলমহলে শান্তি ও উন্নয়নের দাবিতেই আমাদের এই কর্মসূচি।”
বন্ধ সমর্থনে মাওবাদী পোস্টার লোধাশুলিতে।-নিজস্ব চিত্র
প্রশাসন অবশ্য সাত দিনের ‘সময়সীমা’ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে নেই। মুখ্যমন্ত্রীর গত শনিবারের ঝাড়গ্রাম সফরের সময় থেকেই যৌথ বাহিনীর লাগাতার টহল-তল্লাশি চলছে। আর বুধবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ ‘অপারেশন’। পুলিশি পরিভাষায় যা ‘এরিয়া ডমিনেশন’। মাওবাদী-ডেরা হিসেবে অনুমিত এলাকায় চলছে ‘ফ্লাশ-আউট’। দিনে-রাতে টানা তল্লাশি চলছে ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড়, শালবনি, গোয়ালতোড়ের জঙ্গল এলাকায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক পুলিশ-কর্তার যুক্তি, মাওবাদীরা মুখে আলোচনার কথা বললেও তাদের খুন-সন্ত্রাসের কর্মসূচি বাতিলের কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। সে ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখতে পুলিশকেও পাল্টা অভিযানে যেতে হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামে এসে জেলার পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ।
এত আয়োজনের পরেও শুক্রবার ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি পুলিশ-ক্যাম্প থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বন্ধের সমর্থনে মাওবাদী-পোস্টারের সন্ধান মিলেছে। জঙ্গলমহলের অন্য কিছু জায়গাতেও একই পোস্টার চোখে পড়েছে। সকালে শালবনির গোদামৌলিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের দোরগোড়ায় একটি ব্যাগ ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পৌঁছয় যৌথ বাহিনী। আসে বম্ব স্কোয়াড। ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র ছাড়া আর কিছু মেলেনি।
কালীপুজোর রাতেই জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের ‘বাঁদনা পরব’ শুরু হয়। সেই পরব ও দীপাবলির ঠিক তিন দিন আগে মাওবাদীরা বন্ধ ডাকায় বিরক্ত সাধারণ মানুষ। প্রকাশ্যে বিরোধিতার ‘সাহস’ না দেখালেও মাওবাদী ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলির প্রতি ক্রমেই বীতশ্রদ্ধ হচ্ছেন এলাকাবাসী। মানুষকে সেই ‘সাহস’ জোগাতেই বোধহয় পিংবনিতে সভা করছে যুব তৃণমূল। সভা ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে পুলিশও। শালবনির বিধায়ক তথা যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতোর দাবি, “জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মসূচির পাশেই রয়েছেন তাঁরা।” একই ভাবে বন্ধের বিরোধিতা করে ও জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানিয়ে এ দিন পুরুলিয়ার মাওবাদী-উপদ্রুত বলরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাইক প্রচার করেছে ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি’।
তৃণমূল যখন বন্ধ-বিরোধিতায় মরিয়া, তখন জঙ্গলমহল থেকে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার, পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির ধৃত নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ওই কমিটির সঙ্গে সরকারের আলোচনা-সহ ছ’ দফা দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন চিঠি দিয়েছে এসইউসি। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, “সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করুক। কিন্তু আগে জনগণের কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।” দাবি মানা না হলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
জঙ্গলমহলের বেকারদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পুলিশে চাকরির যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তাকে ‘সালওয়া জুড়ুম’-এর সঙ্গে তুলনা করে সৌমেনবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষের ন্যায্য আন্দোলনকে দমনের জন্য সেখানকারই যুবকদের পুলিশ হিসাবে নামানো অন্যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.