পেটের তাগিদে কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরে কাজ করতে গিয়ে কার্যত ‘বন্দি’ হয়ে পড়েছিলেন পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার ১৫ জন শ্রমিক। পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির আবেদনে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন। কর্নাটকের একটি মানবাধিকার সংগঠন ও স্থানীয় পুলিশের তৎপরতায় ‘বন্দিদশা’ ঘুচিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হুড়া ব্লকের লক্ষ্মণপুর ও লায়েকডি এবং ছাতনা ব্লকের কাঠারিয়া গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন ওই ১৫ জন শ্রমিক।
ম্যাঙ্গালোরের কাছে ঘুরকুড়ে নামে একটি এলাকায় নির্মাণ-শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছিল তাঁদের। এ বছর ২৩ অগস্ট লায়েকডি গ্রাম থেকে রওনা হয়েছিলেন শ্রমিকেরা। ফিরলেন প্রায় দু’মাস পরে। শুক্রবার কর্মস্থলের দুর্দশার অভিজ্ঞতার কথা বলার সময়েও তাঁদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। লায়েকডির হরিমন্দিরে বসে শ্রমিকেরা শোনাচ্ছিলেন তাঁদের ‘বন্দিদশা’র বিবরণ। |
তাঁদেরই অন্যতম বিকাশ দাস বললেন, “আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল মাসে চার হাজার টাকা মাইনে পাব। সঙ্গে থাকা-খাওয়া। বাড়তি কাজ করলে মিলবে ওভারটাইম। ওখানে আমাদের একটা বড় ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। কাজের কোনও বাঁধাধরা সময় ছিল না। কোন সকালে নিয়ে যাওয়া হত। ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা বা তার চেয়েও দেরি। রাতের খাবার বলতে ডাল, ভাত, আলুসেদ্ধ।”
শ্রমিকদের বিবরণ, “কর্মস্থলে যাওয়ার আগে ও ফিরে একই খাবার পেতাল দিনের পর দিন। সেটাও নিজেদেরই রান্না করতে হত।” ভোলানাথ দাস নামে এক শ্রমিকের কথায়, “সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে গায়ে গরম জল ছেটানো হত। একদিন বলেছিলাম, শরীর খারাপ তাই কাজে যেতে পারব না। তাতে লাঠি দিয়ে আমাকে পেটাল। সঙ্গে জুটল গালিগালাজ।” ভোলানাথ দেখালেন মারের চোটে এখনও কালশিটে তাঁর শরীরে। শ্রমিকেরা জানালেন, ঝাড়খণ্ড থেকেও তাঁদের মতো কয়েক জন শ্রমিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক দিন পালিয়েছিলেন। তাঁদের স্টেশন থেকে ধরে এনে মারধর করা হয়। এর পরে তাঁরাও পালানোর চিন্তা ছেড়ে দেন। বিষ্ণু দাস বললেন, “প্রাপ্য টাকা দিত না। ক্রীতদাসের মতো খাটানো হত।” এর পরেই বিপ্লব গোপ নামে এক শ্রমিক এক দিন কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে গ্রামে ফোন করে সব জানান। লায়েকডির বাসিন্দা, খেতমজুর সমিতির সদস্য বিপ্লব মণ্ডল জানান, তাঁর কাছেই ওই ফোন এসেছিল। তিনি সংগঠনের নেতৃত্বকে সব জানান। তাঁরা কর্নাটক পুলিশ ও স্থানীয় এক মানবাধিকার সংগঠনকে সব জানান। এর পরেই সোমবার পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। সেই সময় হাজার খানেক টাকা করে তাঁরা পারিশ্রমিক পেয়েছেন। শ্রমিকদের কথায়, “কাজ করতে আর অতদূরে যাব না।” গ্রামের যে ব্যক্তির মারফত ওই শ্রমিকেরা বাইরে গিয়েছিলেন, তাঁকে এ দিন পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলাও রুজু করেছে হুড়া থানার পুলিশ। |