এক আলুচাষি তথা আলু ব্যবসায়ীর অপমৃত্যু হয়েছে। বিনয় ঘোষ (৫২) নামে ওই আলু ব্যবসায়ীর বাড়ি বাঁকুড়ার জয়পুর থানার গোকুলনগর গ্রামে।
|
বিনয় ঘোষ। |
মৃতের স্ত্রী-র দাবি, ব্যবসায় আর্থিক লোকসানের কারণে তিনি আত্মঘাতী হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি পরিবারের তরফে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিনয়বাবু এলাকায় সম্পন্ন ব্যবসায়ী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। বুধবার রাত ১টা নাগাদ আলুচাষের জমিতে দেওয়ার জন্য বাড়িতে রাখা কীটনাশক খান বিনয়বাবু। বাড়ির লোকজন সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ৩টে নাগাদ হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার গোকুলনগরে মৃতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী বিজলিদেবী ও মেয়ে সুমা। তাঁদের দাবি, “গত তিন বছর ধরে আলু চাষ ও ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছিল। তার জন্যই এই ঘটনা।” বিনয়বাবুর ছেলে প্রতীপ অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
গোকুলনগর গ্রামটি সলদা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নঙ্গুর মাঝিরও দাবি, এলাকার আলুচাষিরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না। জয়পুরের বিডিও চিত্রদীপ সেন বলেন, “বিনয়বাবু এলাকার সম্পন্ন আলু ব্যবসায়ী ছিলেন। চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে পাইকারি ব্যবসা করতেন। নিজের চাষও ছিল। শুনেছি, হিমঘরে তাঁর ১০০ গাড়ি আলু রাখা ছিল। তখন যে দামে আলু মজুত রেখেছিলেন, এখন তার চেয়ে অনেক কম দামে দাঁড়িয়েছে। তবে এই কারণেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, তা বলা সম্ভব নয়। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।” |
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্যও ছিলেন বিনয়বাবু। ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ নিয়োগীর দাবি, “আলু ব্যবসায়ীরা এখন লোকসানের মধ্যে দিয়েই চলছেন। গত বার অতিফলনের ফলে সংরক্ষণও বেশি হয়েছে। ফলে উদ্বৃত্ত হয়েছে বহু আলু। যা ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়েও শেষ করা যাচ্ছে না।” যদিও বিনয়বাবুর আত্মহত্যার কারণ আর্থিক লোকসান না কি পারিবারিক তা বোঝা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। একই সঙ্গে তাঁর আর্জি, সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবুক। আলুচাষে লোকসানের কথা বারবার কৃষি বিপণন দফতরে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিনয়বাবুর আদিবাড়ি জয়পুর থানারই ব্রাহ্মণ গ্রামে। বছর কয়েক আগে তিনি গোকুলনগরে পাকা বাড়ি তৈরি করেন। দুই ছেলেমেয়েই কলকাতায় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। মেয়ে সুমার কথায়, “নাগাড়ে তিন বছর লোকসান হওয়ায় বাবা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।” |