মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ডিএনএ-পরীক্ষার ফলও মিলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য পুলিশের ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসের স্ত্রী বর্ণালি ওই দেহটি তাঁর স্বামীর বলে মানতে চাননি। তাই প্রায় আট মাস মৃতদেহটি পড়ে রয়েছে বাঁকুড়া মর্গে। বর্ণালির বক্তব্য, “আমি বিশ্বাস করি না ওটা পার্থর দেহ।” পুলিশ সূত্রে খবর, তাই ফের তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
পার্থ ও সৌম্যজিৎ বসু অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান গত বছরের অক্টোবর মাসে। গত মার্চে অযোধ্যা পাহাড় থেকেই পুলিশ দুই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পোশাক দেখে দেহ দু’টি পার্থ ও সৌম্যজিতের বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়।
|
পার্থ বিশ্বাস |
সন্দেহ কাটাতে দুই যুবকের মায়ের রক্তের নমুনা উদ্ধার হওয়া দেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ১৭ মে পুলিশ জানায়, ডিএনএ পরীক্ষা অনুযায়ী, দেহ দু’টি পার্থ ও সৌম্যজিতেরই।
সৌম্যজিতের পরিবারের তরফে সেই দেহ ১৭ তারিখই বাঁকুড়া থেকে চুঁচুড়ায় এনে সৎকার করা হয়। সৌম্যজিতের দাদা অভিজিৎ বসুর কথায়, “১৯ অক্টোবর ওরা বেড়াতে গিয়েছিল। ২২ অক্টোবর রাতে ভাইয়ের মোবাইল থেকে শেষ ফোন এসেছিল।
আমরা ধরে নিয়েছি সেটাই তাঁর মৃত্যু দিন।” এক বছর পরে সে কারণেই, বসু পরিবারে আজ, শনিবার ছোট অনুষ্ঠান করে স্মরণ করা হচ্ছে বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্রকে। চুঁচুড়ায় পাড়ার বন্ধুরা গরিব ছাত্রছাত্রীদের বই-খাতা তুলে দিয়ে স্মরণ করবেন সৌম্যজিৎকে।
কিন্তু, পার্থর স্ত্রী বর্ণালি অনড়। ফোনে তিনি বলেন, “আমি এ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও কথা বলতে চাইছি না।” যে দেহটিকে পার্থর বলে পুলিশ জানিয়েছিল, তা তাঁর স্বামীর বলে মেনে নেননি তিনি। ফলে দেহটি আজও পড়ে রয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। পুলিশ সূত্রে খবর, ফের তদন্ত চেয়ে মাসখানেক আগেই বর্ণালি চিঠি লিখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
পার্থ ও সৌম্যজিতের নিখোঁজ হওয়ার পরে বিস্তর হইচই হয়েছিল। ওই সময় রাজ্য পুলিশের কর্তারা বার বার বলেছেন, দুই যুবক জীবিত। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। মৃতদেহ দু’টির ডিএনএ পরীক্ষার পরে পুলিশও মেনে নিয়েছে, ২২ তারিখই মেরে ফেলা হয়েছিল ওই দু’জনকে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, বর্ণালি যদি ওটি পার্থর দেহ বলে সত্যিই শেষ পর্যন্ত না মেনে নেন, তা হলে ওই দেহটি নিয়ে কী করা হবে?
উচ্চপদস্থ এক পুলিশ অফিসারের মতে, “নিয়ম অনুযায়ী, কোনও কোনও দাবিদার না থাকলে উদ্ধারের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুলিশই উদ্যোগী হয়ে দেহ সৎকার করে।” কিন্তু বাঁকুড়ার মর্গে থাকা দেহটি যেহেতু পুলিশের খাতায় পার্থ বিশ্বাসের, তাই চট করে তার সৎকার করা সম্ভব নয়। পার্থর বাড়ির লোক যদি ওই দেহের দায়িত্ব না নেন, তা হলে কত দিন ওভাবে দেহটি ফেলে রাখা হবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
শুক্রবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “মর্গ পুলিশ সুপারের অধীনে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। দেহটি রয়েছে, এটুকুই শুধু জানি।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া জেলায়। ফলে, সেই জেলার প্রশাসন থেকে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।” পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর কথায়, “এই ঘটনায় কোনও সময়সীমা বলা সম্ভব নয়। বিষয়টির মানবিক দিকও রয়েছে।”
গত এক বছরে দেশ জুড়ে কর্তব্যরত যে পুলিশ অফিসারদের মৃত্যু হয়েছে, শুক্রবারে প্রতিটি জেলায় তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে কুচকাওয়াজ করেছেন সহকর্মীরা। এ বছরে পশ্চিমবঙ্গে মৃত পুলিশকর্মীদের তালিকায় নাম নেই পার্থ বিশ্বাসের। কেন? পুলিশ অফিসারের কথায়, “বাঁকুড়ার মর্গে থাকা দেহটি পার্থর বলেই পুলিশ মনে করলেও, যতক্ষণ তাঁর পরিবার তা মেনে না নিচ্ছেন, তত দিন সরকারি ভাবে তাঁকে মৃত বলা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় মৃতদের তালিকায় পার্থর নাম তুললে তাঁর স্ত্রী-ই আপত্তি করতেন।” আর বর্ণালির কথায়, “মৃতদের তালিকায় কেন পার্থর নাম নেই, তা পুলিশকর্তাদেরই জিজ্ঞাসা করুন না!” |