হাসনাবাদ-পারহাসনাবাদ সেতু তিন বছরের কাজ শেষ হয়নি ছ’বছরেও
থা ছিল তিন বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে। তিন বছরের সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়ে ছ’বছর হতে চলল, কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার কাটাখাল নদীতে হাসনাবাদ থেকে পার হাসনাবাদ সেতুর কাজ এখনও অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছে। এখনও রোজ সুন্দরবন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নৌকাতেই পারাপার করতে হচ্ছে। অনেকেই ভেবেছিলেন রাজ্যে ক্ষমতার হাত বদলের পরে কাজে গতি আসবে। কিন্তু তা আর হয়নি। কিছু দিন আগে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় মানুষজন সেতু তৈরর কাজে ঢিলেমি নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগ পেয়ে খাদমন্ত্রী বলেন, “অল্পদিনের মধ্যেই তিনি পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীকে নিয়ে হাসনাবাদে আসবেন। সেতু তৈরির কাজ শেষ করতে কেন দেরি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিজস্ব চিত্র
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসনাবাদে কাটাখাল নদীর উপরে সেতুটির শিলান্যাস করেছিলেন। খরচ ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি টাকা। ২০০ মিটার লম্বা দু’টি লেন-এর সেতুটির দু’পাশে ৩৫০ মিটার করে রাস্তা হওয়ার কথা। সেতুর শিলান্যাস করে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিন বছরের মধ্যেই সেতু তৈরি হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তদানীন্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেতুর কাজ শেষ করে মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে তার উদ্বোধনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। হাসনাবাদ সেই সময় আবাসন ও কারিগরি মন্ত্রী গৌতম দেবের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় সেতুর কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করেছিলেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি। উল্টে যে গতিতে সেতু তৈরির কাজ চলতে থাকে তাতে তা সময়ে শেষ করা নিয়েই সন্দেহ দেখা দেয় স্থানীয় মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সেই সন্দেহ আরও চেপে বসে এলাকার মানুষের মনে। তবে ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে কর্মসংস্কৃতির উপরে জোর দিয়েছেন তাতে ফের আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন হাসনাবাদের মানুষ।
২০০৬-এ শিলান্যাসের পর আজ পর্যন্ত সেতুর কাজ বলতে নদীর দু’দিকে দু’টি কংক্রিটের স্তম্ভ এবং দু’পারে সংযোগকারী রাস্তার কিছু কাজ হয়েছে। সেতুটি তৈরি হয়ে গেলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের খুবই সুবিধা হবে। শুধু তাই নয়, শহর কলাকাতার সঙ্গে সুন্দরবনের সড়ক যোগাযোগও মসৃণ হবে। উন্নতি হবে পর্যটন শিল্পের। পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হবে।
সেতুর কাজে ঢিলেমি নিয়ে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অরুণ ঘোষ বলেন, “তিন বছরের বদলে ছ’বছর কাটতে চলল। অথচ এখনও সেতুপ পঁচাত্তর শতাংশ কাজ বাকি। আসলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে সেতু তৈরির খরচ বাড়ানোই উদ্দেশ্য। আর সে জন্যই কাজে ঢিলেমি দেওয়া হয়েছে।” বিজেপি নেতা নিমাই দাস বলেন, “সেতুর জন্য আগে থাকতে কিছু জায়গায় দোকানপাট, বাজার ভেঙে দেওয়া হয়। এখন নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ওই সব ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন।” টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরবনের মানুষের স্বার্থেই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হওয়া জরুরি। অথচ তা না হয়ে এখানকার সেতুর কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্যানিংয়ে আর একটি সেতুর কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানকার কাজের গতি কমে গিয়েছে। সমস্যার কথা জানিয়ে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করতে পূর্তমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।” সেতুর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হোক, চান সিপিএম নেতা শক্তি মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “নদীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি জায়গায় দু’টি স্তম্ভের কাজ ঠিক সময়েই শেষ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে কাজের গতি আশাপ্রদ নয়। দ্রুত যাতে সেতুর কাজ শেষ হয় সে ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত।”
তবে কেন সেতুর কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে দফতরের মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকারের আলোচনা হয়েছে বলে পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। পূর্ত দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (স্টেট হাইওয়ে সার্কল ওয়ান) প্রবীর সেন বলেন, “সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার সংস্থাকে বলা হয়েছে। শীঘ্রই দু’টি স্তম্ভের উপরে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.