বিকল ট্রাফিক সিগন্যাল, নিত্য ভোগান্তি হলদিয়ায়
কাল ৮টা। হলদিয়ার মঞ্জুশ্রীচকে সিগন্যালে হলুদ আলো দেখে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান অরুণবাবু। ধাক্কা লাগল উল্টো দিক থেকে আসা একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে। দু’দিকের সিগন্যালই যে হলুদ! বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলেও অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ি চালকের সঙ্গে শুরু হল বাগবিতণ্ডা।
শুধু বিকল ট্রাফিক সিগন্যাল নয়, ফুটপাতে হকারদের জবরদখল, রাস্তা আটকে গাড়ির সারি আর তীব্র যানজটসব মিলিয়ে হাসফাঁস অবস্থা শিল্পশহর হলদিয়ায়। সিগন্যালিং ব্যবস্থায় গোলমালের জন্য মাঝেমধ্যেই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে নিত্য যানজটে নাকাল হতে হয় শহরবাসীকে।
মঞ্জুশ্রী মোড় হলদিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই রাস্তাতেই রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল, মহকুমাশাসকের কার্যালয়। বহুতল শপিং কমপ্লেক্স থেকে দোকান-হোটেল-সিনেমাহল সবই রয়েছে ব্যস্ত এই এলাকায়। সব সময়ই মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। এই রাস্তা দিয়েই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল হয়ে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে যাতায়াত করে বহু গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা কালীপদ দাসের কথায়, “সারাদিন সিগন্যালে হলুদ আলো জ্বলে থাকায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময়েই সিগন্যাল খারাপ থাকার কথা মনে থাকে না। তা ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় অনেকেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়। এর উপরে পথচারীরা ফুটপাতের বদলে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ফলে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা হয়।”
এই সমস্যার জন্য মঞ্জুশ্রীচক এবং চৈতন্যপুর, রানিচক, ব্রজলালচকের মতো মহকুমা সদরের ব্যস্ততম রাস্তায় পুজোর আগে এক বেসরকারি সংস্থা স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিংয়ের ব্যবস্থা করে। পরে তার দায়িত্ব মহকুমার পুলিশ-প্রশসানকে দেওয়া হয়। কিন্তু পুরোদমে এই পরিষেবা চালু করা যায়নি। হলদিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মাইতি বলেন, “কিছু সমস্যা আছে বলেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। ওই ব্যবস্থা চালুর জন্য অন্তত ৩৫ জন যোগ্য কর্মী দরকার। পুরসভাকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু জানাননি। পুরসভা স্বেচ্ছাসেবক দিলে কালীপুজো থেকে ওই ব্যবস্থা চালু করা যাবে।” হলদিয়ার মহকুমাশাসক এস গৌড়িসরিয়া বলেন, “পুজোর আগে আমরা এই নিয়ে বৈঠক করেছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক চেয়ে পুর-কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম সেই সময়। তবে, এখনও তার কোনও উত্তর আসেনি।” উপ-পুরপ্রধান নারায়ণ প্রামানিকের অবশ্য বক্তব্য, “স্বেচ্ছাসেবকের জন্য লিখিত আবেদন এসেছে বলে জানা নেই। এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর উপরে মঞ্জুশ্রী মোড়ে রাস্তার উপরেই সার দিয়ে লরি, ট্রাক, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে বলে অভিযোগ। অথচ ফুটপাত দিয়ে চলার উপায় নেই। গোটা ফুটপাত জুড়ে রয়েছে বহু অস্থায়ী দোকান। ফলে এলাকার মানুষকে হাঁটতে হয় রাস্তা দিয়ে। বাসগুলি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডের পরিবর্তে রাস্তাতেই যাত্রী ওঠানো-নামানোর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষুদিরাম বেরা বলেন, “ফুটপাত দখল করে রাখলে আমরা পথচারীরা হাঁটব কোথা দিয়ে! পুরসভা সব দেখেও উদাসীন। পুরসভার কাছে ফুটপাত পরিষ্কারের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। ফুটপাত দখলমুক্ত হোক অবিলম্বে।”
একই অবস্থা চৈতন্যপুর ও রানিচক মোড়ের। অভিযোগ, সেখানেও রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ভ্যান, গাড়ি, বাস। অথচ ওই এলাকাতে রাস্তার পাশেই রয়েছে চক্ষু হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ। সেখানেও বেহাল সিগন্যালিং ব্যবস্থা। রাস্তার উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট, ছোটবড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। ফুটপাত দখল করে আছে অসংখ্য দোকানপাট। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা পার্থ বটব্যালও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যানজট তো হবেই। রাস্তাটা কি গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা! যে যেমন ভাবে পেরেছে রাস্তা, ফুটপাত দখল করেছে। পুরসভায় বার বার দাবি জানিয়েও এই সব সাধারণ সমস্যার সমাধান হয় না।” জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা যুব-তৃণমূলের সম্পাদক আনন্দময় অধিকারীও বলেন, “পুরসভা পর্যন্ত বেআইনি ভাবে ছাড়পত্র দিয়ে পূর্ত দফতরের জায়গায় ফুটপাত জুড়ে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির অনুমতি দিয়েছে। মানুষ কোথা দিয়ে হাঁটবে!” যদিও চৈতন্যপুর মোড়ের শপিং কমপ্লেক্সটি পুরসভার জায়গাতেই বলে দাবি উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিকের। ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য পুরসভা ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.