কালো মেয়ের পায়ের তলায়...
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই বারোয়ারি ক্লাবগুলি মেতে উঠেছে কালীপুজোর প্রস্তুতিতে। বিভিন্ন ক্লাবের কালীমূর্তিতে থাকছে নানা বৈচিত্র। কেউ বা সাবেক রীতি আঁকড়ে রেখে দর্শক টানেন, কেউ আবার দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও থিমের চমকে মেতেছেন। থাকছে আলোর ক্ষেত্রেও নতুনত্ব।
ডাকাতে কালীবাড়ির আদলে মণ্ডপ টালিগঞ্জ বিজয়ী সঙ্ঘের। পুরনো ভাঙাচোরা দেওয়াল আর গাছগাছালি দিয়ে জঙ্গল তৈরি করেছে এই ক্লাব। প্রতিমা এখানে শ্যামাকালীর। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে
থাকছে আলোকসজ্জা।
আজাদগড় ব্যায়াম সমিতির পুজোয় থাকছে অরণ্যদেবের পাহাড় আর গুহা। এখানে মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হচ্ছে পাথরে খোদাই করা কালীমূর্তি। এ বারের বিশেষ আকর্ষণ ধামসা-মাদল সমেত পুরুলিয়ার আদিবাসীদের নৃত্য। থাকছে মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলো-আঁধারির খেলাও। আজাদগড়ের টালিগঞ্জ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ দার্জিলিং ম্যালের মহাকালী মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে। ক্লাব প্রাঙ্গণের পাশে গজিয়ে ওঠা একটি বড় গাছকে ঘিরেই মণ্ডপটি সেজে উঠছে। ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রঙের পতাকা,চট ও প্যারিস। টালিগঞ্জ ছাত্র সঙ্ঘের মণ্ডপ বৌদ্ধ প্যাগোডার আদলে। থাকবে ৮ ফুট উচ্চতার এলোকেশী কালী। পুজো উপলক্ষে থাকবে জলসাও।
বাঁশের কাঠামোর উপর প্লাস্টিকের দড়ি ও ফিতে দিয়ে কারুকার্য করে অজিণ্ঠা গুহার আদলে তৈরি হচ্ছে টালিগঞ্জের নেতাজি নগর কলোনির ৪ নম্বর স্পোর্টিং ক্লাবের (ফোর এস সি) পুজোমণ্ডপ। ৩০ ফুট উঁচু এই মণ্ডপে থাকছে অজিণ্ঠার ছবির আদলে তৈরি কালীমূর্তি। আর মণ্ডপের ভিতরে আলোর খেলায় তুলে ধরা হচ্ছে মূল গুহার ভিতরের পরিবেশ।
আলিপুর রবীন্দ্রনাথ সঙ্ঘের শ্যামাকালী পুজোয় বিশাল মাঠে মেলার পরিবেশ। মূল মন্দির তৈরি হচ্ছে খড়ের একচালার মন্দিরের আদলে। থাকছে পুতুলের ধাঁচে কালীমূর্তি।
প্লাস্টার অফ প্যারিস, থার্মোকল আর কাপড় দিয়ে তৈরি খাজুরাহোর মন্দির তুলে ধরা হচ্ছে ল্যান্সডাউন সাদার্ন সমিতির কালীপুজোয়। চালি নিয়ে প্রতিমার উচ্চতা এখানে ২২ থেকে ২৩ ফুটের মতো। প্রতিমা ডাকের সাজের। এ ছাড়াও পরানো হয় সোনার গয়না। দেবীর মুণ্ডমালাও রুপোর। আর এখানে আলোকসজ্জা চন্দননগরের। চলে গানের জলসাও।
ভবানীপুর চড়কডাঙা সর্বজনীন ক্লাবের কালীপুজোয় মণ্ডপ পুরনো ভাঙাচোরা মন্দিরের আদলে। মার্কিন কাপড়ের উপর নানা রং স্প্রে করে ভাঙা মন্দিরের রূপ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিমা এখানে দক্ষিণাকালী। তবে ভাঙা মন্দিরের সঙ্গে মানানসই আলোকজসজ্জাও থাকবে। পুরনো রাজবাড়ির ঠাকুর দালান তুলে ধরা হচ্ছে শেক্সপিয়র সরণির অল ইয়ুথ ফ্রেন্ডস ক্লাবের কালীপুজোয়। এখানে মুলত পাঁচটি রূপে কালীর আরাধনা হয়। এ বারে থাকছে তারাপীঠের তারামা, দক্ষিণেশ্বরের কালী, শ্মশানকালী, শ্বেতকালী আর শ্যামাকালী।
খিদিরপুর সান্ধ্যনীড়ের পুজো সাবেক হলেও তাদের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ প্রতিমার উচ্চতা এবং সাজসজ্জায়। মণ্ডপ কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। পুজো উপলক্ষে জলসার আয়োজন করা হয়েছে। খিদিরপুর সম্মিলিত সঙ্ঘর মণ্ডপও কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। খিদিরপুর বন্ধুচক্রের মণ্ডপ দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে। কাপড়, থার্মোকল আর পাট কাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ। তবে প্রতিমা এখানে বরাবরের মতোই শ্মশানকালী।
গ্রামবাংলার ধান ভেঙে চাল তৈরি করার পদ্ধতিকে মণ্ডপে তুলে ধরছে নিউ আলিপুর রেড স্টার অ্যাসোসিয়েশন। প্রাঙ্গণে থাকছে খড়ের দড়ি দিয়ে তৈরি ধানের গোলা, ঢেঁকি। মণ্ডপ হচ্ছে গোলার আকারে। এখানে শ্যামাকালীর পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি।

৯৭ বছরের চেতলা ২৪ পল্লি বরাবরই দশমহাবিদ্যার পুজো করে থাকে। পুজের দিন শ্যামাকালীর পুজোর পর তা বিসর্জন হয়ে যায়। পরে ছটপুজোর দিন দশমহাবিদ্যার অন্যান্য মূর্তির পুজো করা হয়। কুমারীপুজো এই পুজোর বিশেষত্ব। বীরভূম থেকে তান্ত্রিক এনে পুজো হয় দক্ষিণ চেতলা সর্বজনীন ক্লাবের। কালীর উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট এবং দেবী এখানে দশ হাত আর দশ মুণ্ডের মহাকালী।
আলিপুর আরাধনা সমিতিতে মহালয়ার দিন প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। আলিপুর দুর্গাপুর ব্রীজের পাশে দুর্গাপুর জাগরণী সঙ্ঘের পুজোর বিশেষত্ব, এখানে শ্যামাকালীর পাশাপাশি জীবন্ত কালীর পুজো করা হয়। এ বারে দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, আদ্যাপীঠ আর কালীঘাটের মন্দির-সহ প্রতিমা তুলে ধরা হচ্ছে। থার্মোকল, কাগজ আর বাঁশের বাঁখারি দিয়ে চারটি মণ্ডপও তৈরি করা হচ্ছে।
বিড়লা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে হাজরা মনোহর পুকুর রোডের রসা ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের কালীপুজোয়। কাপড়, থার্মোকল আর প্লাই দিয়ে তৈরি মণ্ডপের উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট। থাকছে ভোগের আয়োজন আর গানের জলসাও।
পূর্ব পুঁটিয়ারি যুবক সমিতির পুজোর মূল আকর্ষণ শব্দহীন আতসবাজির প্রদর্শনী। কাল্পনিক মন্দিরের আকারে মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে। পুজো হয় নবকালীর। থাকছে গানের অনুষ্ঠান। এলাকার মানুষের কাছে বিশেষ আকর্ষণ বিসর্জনের দিন বিভিন্ন সঙের সঙ্গে কাচে মোড়া রথ, এক্কা গাড়ি, ব্যান্ড সমেত আলোর গেটের শোভাযাত্রা।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য ও পিন্টু মণ্ডল

বিজয়া সম্মিলনী
সম্প্রতি স্বামী দেবানন্দ আশ্রম দেবসঙ্ঘ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের বিজয়া সম্মিলনী হয়ে গেল মহারাষ্ট্র নিবাসে। উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দেবানন্দ। এই উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের। এতে অংশগ্রহণ করেন ট্রাস্ট পরিচালিত স্কুল ও কোচিং সেন্টারের ছাত্র-ছাত্রীরা। এই উপলক্ষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.