কালীর অস্ত্রসংবরণ
লোর রোশনাই, আতসবাজির প্রদর্শনীর সঙ্গে প্রথা মেনে মাতৃবন্দনা। সাবেক পুজোর চলই বেশি। কিন্তু গুটি গুটি পায়ে শ্যামাপুজোতেও থাবা বসাচ্ছে থিমপুজো।
কাঁকুড়গাছি এলাকায় দুর্গোৎসবের চলই বেশি। তা বলে শ্যামাপুজোতেও আড়ম্বর কম নয়। এখানে সাবেক পুজোর আধিপত্যই বেশি। অবশ্য থিমপুজোও হচ্ছে। যেমন, বাগমারি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। এ বার সেখানে পুজোর বিষয়বস্তু ‘ত্রিচক্রব্যূহ’। উদ্যোক্তাদের মতে, শৈশব-যৌবন-বার্ধক্য, মানুষের জীবনে এই তিনটি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তাকে ঘিরে রাখে। সেই সমস্যা কাটিয়ে কী ভাবে মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হয়, তাই এ বার দেখানো হবে এই মণ্ডপে।
২৯-এর পল্লির ৬৫তম বর্ষের পুজোয় মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। সাবেক প্রতিমা। অন্নকূট উৎসবে পাঁচ হাজার মানুষ যোগ দেন বলে উদ্যোক্তারা জানান। এ পুজো সুবিমল (খোকন) মিত্রের পুজো নামেই এলাকায় খ্যাত।
কাঁকুড়গাছি সম্মিলিত শ্যামাপুজো কমিটির সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। পুজো পরিচালনা করে ‘আমরা সবাই’ ক্লাব। পরেশ পালের পুজো নামে পরিচিত এই পুজো। পরেশবাবু জানান, শান্তির বার্তা দিতে মণ্ডপ সাজানো হবে মহাত্মা গাঁধীর সাবরমতীর আশ্রম, গৌতম বুদ্ধের মন্দির এবং কেদারনাথের মন্দির দিয়ে। এ ছাড়াও স্বপ্নার বাগান, আমরা ক’জন ক্লাবের পুজোতেও দর্শকদের ঢল নামবে বলেই আশাউদ্যোক্তাদের।
কাঁকুড়গাছির সঙ্গেই থিম আর সাবেক পুজো নিয়ে পাল্লা দিয়ে চলছেন ফুলবাগান, বেলেঘাটা এলাকার পুজোর উদ্যোক্তারা। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে বাগমারি আমরা ক’জন-এর এ বারের থিম ‘সত্য-জননী’। এ বার বিবেকানন্দ সঙ্ঘের নিবেদন শক্তির আরাধনায় ‘শক্তিপীঠ’। উদ্যোক্তারা জানান, বিভিন্ন রঙের দড়ি এবং প্লাই কেটে মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। ব্যবহার করা হবে চারশো থেকে পাঁচশো পুজোর ঘণ্টা। ১২ ফুটের প্রতিমা তৈরির পরিকল্পনা করেছেন উদ্যোক্তারা।
ফুলবাগান যুবকবৃন্দের পুজোয় এ বার থিম তৈরি হয়েছে শিরডি সাইবাবাকে কেন্দ্র করে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন মডেল দিয়ে সাজা হবে মণ্ডপ। প্রতিমা অবশ্য সাবেক।
৫৬তম বর্ষে বেলেঘাটা নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের থিম ‘দাবার চাল’। দাবার বোর্ডের আদলে মণ্ডপ। কৃষ্ণকালী রূপে প্রতিমা। সংসার থেকে সমাজ সর্বত্রই সকলে রাজনীতির শিকার, এই থিমের মধ্য দিয়ে এটাই প্রকাশ করতে চান উদ্যোক্তারা। বেলেঘাটা রাসমণি বাজারের সাবেক পুজোয় মণ্ডপ তৈরি হবে মন্দিরের আদলে। শ্যামারূপে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। একই ভাবে শুঁড়া যুবকবৃন্দও সাবেক পুজো ঘিরে মানুষের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে পা দিল বেলেঘাটা হলিডে ক্লাব। জায়গার অভাবে থিম পুজোর ইচ্ছা থাকলেও তা করা যায় না বলে জানান উদ্যোক্তারা। তবে এই সাবেক পুজোও আড়ম্বরে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলেই তাঁদের দাবি।
হোপলাইভ অ্যাথলেটিক ক্লাব তাদের ৬৬তম বর্ষের মণ্ডপে শান্তি ও মৈত্রীর বার্তা দিতে চায়। মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে মৈত্রীর প্রতীক রাখি দিয়ে। দশ হাতের কালীও মণ্ডপসজ্জায় নিরস্ত্র। তবে যে মূল প্রতিমা পুজো হবে সেখানে কালীর রূপ প্রথানুগ।
শ্রদ্ধাঞ্জলির পুজোয় থিম ‘সপ্তরঙা রামধনুতে’। ২৭তম বর্ষে রামধনুর সাত রঙ মণ্ডপ থেকে ছড়িয়ে পড়বে ফাইবারের প্রতিমাতেও। জেলেপাড়া পাকুড়তলা কমিটির পুজো সাবেক, তবে মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মডেল।
উড়িয়াবাগান যুবকগণ (বটতলা)-এর পুজোয় উঠে আসবে কালীর একটি পুরনো জরাজীর্ণ মন্দির। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেই প্রাচীন মন্দিরের ভিতরে বসানো থাকবে ডাকাতে কালীর আদলে তৈরি কালীপ্রতিমা। পুজো হবে অবশ্য সনাতন প্রতিমার।
এ ছাড়াও কর্মী সঙ্ঘ ও সিআইটি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোতেও মানুষের ঢল নামবে বলেই আশা উদ্যোক্তাদের। তবে থিম বা সাবেক যে ভাবেই পুজো হোক না কেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.